জনপ্রতিনিধিত্ব করতে এসেও ট্রাম্প তাঁর লাগামহীন ব্যক্তিসত্ত্বাকে ঝেড়ে ফেলতে পারেননি, আর তাতেই বিপর্যয়
ট্রাম্পের উত্থানের পিছনেও সেদেশের রক্ষণশীল রাজনীতির অবদান রয়েছে কিন্তু ব্যক্তি ট্রাম্পের অভব্যতা এখন সেই রাজনৈতিক আদর্শের ঘেরাটোপকে ছাড়িয়ে গিয়ে সোজা ইতরামিতে গিয়ে ঠেকেছে।
লা ভেগার নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার এবারের বিতর্কিত মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তৃতীয় এবং অন্তিম বিতর্কসভাটি অনুষ্ঠিত হল। আগের দু'টি বিতর্কসভায় রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সেভাবে সুবিধা না করতে পারলেও তাঁর সমর্থকদের আশা ছিল উনি এই শেষ বিতর্কসভায় ডেমোক্র্যাটিক প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিন্টনকে সমুচিত জবাব দিতে পারবেন।
শুরুটা খারাপ করেনওনি ট্রাম্প। যদিও তাঁর কথাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া মুশকিল কারণ প্রতি মুহূর্তেই ট্রাম্পের অবস্থান বদলায়, কিন্তু বডি ল্যাঙ্গুয়েজে তিনি অন্তত বোঝাচ্ছিলেন যে টেপ কেলেঙ্কারি তাঁকে নিরস্ত করতে পারেনি বিশেষ।
অর্থনীতি, শিশুজন্ম, বিদেশনীতি, আইএস এবং সন্ত্রাস ইত্যাদি প্রশ্নে তিনি হিলারির সঙ্গে সমানে সমানে লড়ছিলেন ঠিকই কিন্তু তাঁর সমস্ত পরিশ্রমে ট্রাম্প নিজেই জল ঢাললেন বিতর্কের শেষদিকে।
ট্রাম্প মার্কিন গণতন্ত্রকেই অসম্মানিত করে বসলেন
সঞ্চালক ক্রিস ওয়ালেস যখন ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন যে যে নির্বাচনকে তিনি বার বার "রিগড" বলে অভিযুক্ত করেছেন, আগামী 8ই নভেম্বর সেই নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পর তিনি তা খোলা মনে মেনে নেবেন কিনা -- ট্রাম্প উত্তর দেন: "তখন ব্যাপারটা নিয়ে ভাবব।" আর তা বলার পরেই ফের সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করেন -- বলেন "দুর্নীতিবাজ" এবং "অসৎ" মিডিয়াই মানুষের মনকে বিষাক্ত করেছে।
সঞ্চালক মহাশয় যখন ট্রাম্পকে বলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিরকালই ক্ষমতার হাতবদল শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়ে এসেছে এবং জিজ্ঞেস করেন তিনিও সেই নীতির প্রতি অনুগত থাকবেন কিনা, রিপাবলিকান প্রার্থী ফের একই উত্তর দেন। "আমি এব্যাপারে তখনই যা বলার বলব। আপাতত এটা রহস্যই থাক।"
ক্যাচ অনায়াসে লুফলেন হিলারি ক্লিন্টন
পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ হিলারির ক্যাচটি লুফতে ভুল হয়নি। ট্রাম্প গণতন্ত্রকেই খাটো করলেন, বলে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী সেই যে প্রথম প্রতি আক্রমণটি শানালেন ট্রাম্পের দিকে, তার পর থেকে কোনও পক্ষই আর ট্রাম্পকে রেয়াত করেননি এব্যাপারে।
আসলে ট্রাম্পের সমস্যা হচ্ছে উনি কিছুতেই বিবেচনা করে কাজ করেন না। ব্যক্তিগত জীবনে উনি যেভাবে চলেন, জনসমক্ষে এসেও ওনার কোনও হেলদোল হয় না। কথা বলার সময়ে বিন্দুমাত্র দায়িত্বজ্ঞানের তোয়াক্কা করেন না ট্রাম্প। মহিলা হোক, প্রতিপক্ষ হোক, আমজনতা হোক, নির্বাচনী ব্যবস্থা হোক, সংবাদমাধ্যম হোক -- ট্রাম্পের তলোয়ারের হাত থেকে নিস্তার নেই কারোরই।
ট্রাম্প এখন আর রক্ষণশীল রাজনীতির প্রতীক নন, একজন অত্যন্ত অভব্য ব্যক্তি
আর এখানেই হচ্ছে মৌলিক সমস্যা। আমেরিকার মতো উদারবাদের দেশে কেউ যদি মধ্যযুগীয় স্বৈরাচারের মতো আচরণ করে, তবে তা সেদেশের সংস্কৃতি-মানুষের পক্ষে বেশ বড় ধাক্কা। ট্রাম্পের উত্থানের পিছনেও সেদেশের রক্ষণশীল রাজনীতির অবদান রয়েছে কিনতু ব্যক্তি ট্রাম্পের অভব্যতা এখন আর সেই রাজনৈতিক আদর্শের ঘেরাটোপকে ছাড়িয়ে গিয়ে সোজা ইতরামিতে গিয়ে ঠেকেছে। আর এখানেই মার্কিন গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা এবারের নির্বাচনে।
ট্রাম্প এখন আর কোনও বিশেষ আন্দোলন নয়, অন্তত আগে যা ভাবা হয়েছিল সেরকম কিছু তো নয়ই। যে সমস্ত রিপাবলিকান সদস্য বা ওই দলের যে গোষ্ঠীগুলি ট্রাম্পের পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন 'কৃষ্ণাঙ্গ ওবামার মার্কিন দেশ'কে উচিত শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে, তাঁরাও এখন দেখছেন কিভাবে সেই রক্ষণশীল আন্দোলনকে ব্যক্তি ট্রাম্প গিলে খাচ্ছেন। এবং শুধু তাই নয়, তিনি তাঁদের পক্ষেও এক আস্ত বিভীষিকা প্রমাণিত হচ্ছেন (পড়ুন ট্রাম্পের মহিলাদের সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য)।
অতএব, এই ট্রাম্প যদি আগামী মাসের নির্বাচনে জিতে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন, তাহলে মার্কিন মুলুকে রাজনৈতিক কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। বরং, ট্রাম্প বনাম আপামর জনসাধারণের অনন্ত সংগ্রাম হয়ে দাঁড়াবে।