নোট বাতিলের প্রভাব পড়েনি, তাই বিজেপি বেড়ে সেকেন্ড রাজ্য-ভোটে
সব হিসেব গুলিয়ে দিল বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই বলুন এই জয় নোট বাতিলের বিরুদ্ধে জনবিদ্রোহ, গণবিদ্রোহ, রাজ্যে ফের বিজেপি-র উত্তরণ সে কথা বলছে না।
সব হিসেব গুলিয়ে দিল বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই বলুন এই জয় নোট বাতিলের বিরুদ্ধে জনবিদ্রোহ, গণবিদ্রোহ, রাজ্যে ফের বিজেপি-র উত্তরণ সে কথা বলছে না। পাশাপাশি সিপিএম তথা বামফ্রন্টকে এক ধাক্কায় তিনে নামিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে উটে আসার ইঙ্গিত কিন্তু দিয়েই রাখল।
কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। সেখানে দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি। তাৎপর্যপূর্ণ ফল বলতেই হবে। কারণ একদা কোচবিহার ফরওয়ার্ড ব্লকের ঘাঁটি। গত লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল প্রার্থীকে যথেষ্ট বেগ দিয়েছিল। এবারও যে ছেড়ে কথা বলবে না, এমন একটা আভাস ছিলই। যতই দল ভাঙুক, ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে নেতাদের তৃণমূলে নাম লেখানোর হিড়িক চলুক, কর্মীরা দল ছেড়ে যাননি, এমন বিশ্বাস ছিল। কিন্তু সেই বিশ্বাসে কশাঘাত করল এই উপনির্বাচন।
তৃণমূল তো বাড়লই, বিজেপিও এক লাফে মাথায় চড়ে বসল বামফ্রন্টের। রাজ্যে দ্বিতীয় দল হয়ে ওঠার বার্তা দিয়েই রাখল তারা। না, শুধু কোচাবিহার নয়, তমলুক, এমনকী মন্তেশ্বরে বিজেপি কমেনি, বরং বেড়েছে। এই বিজেপি-বৃদ্ধিই ভাবাচ্ছে সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক-সহ বামফ্রন্টকে, ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে।
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, তৃণমূল বিপুল জয় পেয়েছে। জয়ের মার্জিন আরও বেড়েছে। এবং এমনই বেড়েছে যে, ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে তারা। এটা মনে হতেই পারে। তারা পিছন ফিরে না তাকাতেই পারে। কিন্তু তৃণমূল যদি বিপুল জয় পেয়ে বিরোধীদের অগ্রাহ্য করে, তবে চরম ভূল করবে। বিজেপি কিন্তু বাড়ছে। এ ধাক্কায় দেড় লাখের বেশি ভোট বাড়া কিন্তু মুখের কথা নয়। তমলুকে ভোট সংখ্যার বিপুল বৃদ্ধি না ঘটলেও গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে বিজেপি-র ভোট। মন্তেশ্বরেও শক্তি ধরে রেখেছে গেরুয়া শিবির।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নোট বিতর্কের পরও কিন্তু বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক ধাক্কা খায়নি। বরং ভোটারদের মেরুকরণের লাভ কুড়িয়েছে তারা। তাই স্পষ্ট করে বলা যায় না নোটের হাওয়ায় যে ভোট হয়েছে, সেখানে মোদির সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়নি। বরং কিছুটা লাভবানই হয়েছে বলা যায়। তা না হলে কোচবিহার বা তমলুকে ভোট বৃদ্ধি হল কীভাবে।
কোচবিহারে বামেদের হটিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে ২৮ শতাংশ ভোট অর্জন করেছে। গত লোকসভার নিরিখে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ভোট বেশি পেয়েছে তারা। বিধানসভার তুলনায় দুই লক্ষেরও বেশি ভোট পেয়েছে তারা। শতাংশের বিচারে তা যথাক্রমে ১২ ও ১৬ শতাংশ বেশি।
তমলুকেও ১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। ভোট বেড়েছে বিগত লোকসভার তুলনায় ৬ শতাংশ। আর বিধানসভার তুলনায় ৯ শতাংশ। তাই রাজ্যে তিন আসনে উপনির্বাচনের কোনওটিতেই না জিতলেও শক্তি বাড়িয়ে কিন্তু অন্য বার্তা দিচ্ছেই গেরুয়া শিবির।
মোট কথা নোট বাতিলের প্রভাব পড়েনি রাজ্যের ভোটে, একথা স্পষ্টতই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর একটা প্রশ্ন উঠে পড়েছে বাম-কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নিয়ে। দুই দলেরই ভোট-ব্যাঙ্কে যে বিজেপিও থাবা বসিয়েছে তাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে উপনির্বাচনে। ক্রমশই প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। দলের প্রতীকের অস্তিত্ব বজায় রাখতে এবারের বোটে লড়েছে কংগ্রেস। কিন্তু তাঁদের প্রতীক চিনতে পারেননি অধিকাংশই।