দিল্লি পুর নির্বাচনে বিজেপির বিপুল আসনে জয়ের ছয়টি কারণ একনজরে
ঠিক কী কী কারণে বিজেপি এত বিপুল আসনে জয় পেল তা জেনে নেওয়া যাক।
উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব মিলিয়ে দিল্লি পুরসভা নির্বাচনে ২৭২টি আসনের মধ্যে ২৭০টিতে ভোটের ফলাফল বেরিয়েছে। এবং ভারতীয় জনতা পার্টি ১৮০টির বেশি আসনে জয়ী/এগিয়ে রয়েছে। এই নিয়ে পরপর তিনবার পুর নির্বাচনে বিজেপি জয় পেল। আর এবার তিনটি পুরসভাতেই আসন সংখ্যার বিচারে আগের চেয়ে বিজেপি অনেক ভালো ফল করেছে।
২০১২ সালের নির্বাচনে বিজেপি তিনটি পুরসভাতেই মসনদে বসলেও আসন সংখ্যা অনেক কম ছিল। এবছর সেটা অনেকগুণ বেড়ে গিয়েছে। গত নির্বাচনে বিজেপি উত্তর দিল্লিতে ৫৯টি আসন, দক্ষিণ দিল্লিতে ৪৪টি আসন ও পূর্ব দিল্লিতে ৩৯টি আসন পেয়ে জয়ী হয়েছিল। অর্থাৎ মোট ১৪২টি আসনে জয়ী হয়। আর এবার তা ১৮০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ঠিক কী কী কারণে বিজেপি এত বিপুল আসনে জয় পেল তা জেনে নেওয়া যাক।
নতুন মুখ
বিজেপির অধীনে দিল্লি পুরসভা চলছে ১০ বছর ধরে। এবং এবছর কোনও কাউন্সিলরকে বিজেপি টিকিট দেয়নি। যার ফলে সহজেই অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টরকে মাত দেওয়া গিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। স্থানীয় নির্বাচনে অনেক সময় প্রার্থীকে দেখে মানুষ ভোট দেয়। তবে এখানে নতুন প্রার্থী হওয়ায় তাদের নয়, বিজেপি দলকে দেখে মানুষ ভোট দিয়েছে।
ব্র্যান্ড মোদী
সাম্প্রতিক সময়ে সবকটি নির্বাচনে বিজেপি ভীষণভাবে নরেন্দ্র মোদী ব্র্যান্ডটিকে আঁকড়ে ধরেছে। এবং প্রায় সবক্ষেত্রেই সুফল মিলেছে। রাজধানী দিল্লির পুরভোটে নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের সুশাসনকে সামনে রেখেই নেমেছিল বিজেপি। আর তাতে সুফলও মিলেছে হাতেনাতে। উত্তরপ্রদেশে বিপুল জয়ের পর ব্র্যান্ড মোদীর উপরে ভরসা করে দিল্লি পুর নির্বাচনেও জয় পেল বিজেপি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে যা প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে গেল মোদী শিবিরকে।
রাজৌরী গার্ডেন উপ-নির্বাচনে আপ-এর হার
রাজৌরী গার্ডেন আসনের আপ বিধায়ক জার্নাইল সিং পাঞ্জাবে চলে গেলে সেখানকার ভোটাররা মনক্ষুণ্ণ হন। তাছাড়া পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনেও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হওয়া দিল্লির ভোটাররা মেনে নিতে পারেনি। কারণ এর আগে ২০১৪ সালে মাত্র ৪৯ দিনের জন্য সরকারে এসে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে কেজরিওয়াল ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন। সেসমস্ত ঘটনাও প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
নির্বাচন কমিশনের দিকে আঙুল তোলা
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই লাগাতার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে তোপ দেগে আসছে আম আদমি পার্টি। উপ নির্বাচনে হারের পর ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে তোপ দাগে আপ। এমনকী পাঞ্জাব ও গোয়ায় নির্বাচনের পরও একই পথে হেঁটেছে আপ শিবির। এদিন বিজেপি বিপুল আসনে জেতার পরও ইভিএম বিভ্রাটের তত্ত্ব সামনে এনেছে আপ।
নিজেই নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছে কেজরির দল
যখন আম আদমি পার্টি দিল্লিতে ক্ষমতায় আসে তখন দিল্লির জনতা দুহাত তুলে সমর্থন জানিয়েছিল। ছোট দল আপের বড় দল কংগ্রেস বা বিজেপিকে মাত দেওয়া তখন বড় বিষয় ছিল। তবে ধীরে ধীরে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকার নিজেদের জনপ্রিয়তা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। দলের মধ্যে একাধিক নেতা দুর্নীতি সহ একাধিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় দল পথ হারিয়েছে।
আপ-এর পদস্খলন
দিল্লিতে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ক্রমাগত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে গিয়েছে কেজরিওয়ালের সরকার। এমনকী লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জংয়ের সঙ্গে বিরোধ থেকে শুরু করে নানা ইস্যুতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে টার্গেট করা হয়েছে। এসব না করে যদি নিজেদের উন্নয়নের দিকগুলি আপ সরকার তুলে ধরত তাহলে অনেক বেশি ইতিবাচক ফল পাওয়া যেত। যেমন বেসরকারি স্কুলগুলিতে ফি-র সামঞ্জস্য আনা, জল ও বিদ্যুতের খরচ কমানো ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি না দিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করতে গিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছে আপ।