সারা দেশে প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে জাতীয় কংগ্রেস! জেনে নিন পরিসংখ্যান
কী বলবেন একে? নেতৃত্বহীনতা নাকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা হারানো? যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, ঘটনা হল, দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যশালী রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেস এখন দেশীয় রাজনীতিতে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার পথে এগোচ্ছে।
বাংলার সরকার কার হাতে? কে পাবে কটি আসন? দেখে নিন বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল
তামিলনাড়ু বিধানসভার দখল নেবে কোন দল? দেখে নিন সমীক্ষার ফলাফল
স্বাধীনতার পর থেকেই জওহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী ও পরে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে সারা দেশ জুড়ে কংগ্রেসী রাজনীতির দাপট অব্যাহত ছিল। ভারতের রাজনীতির শুরু ও শেষ বলতে কংগ্রেসই ছিল। আগামী দিনেও ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস নতুন লিখতে বসলে কংগ্রেসকে বাদ দেওয়া যাবে না। তবে বর্তমান প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস দল হিসাবে কতোটা নড়বড়ে অবস্থায় দাঁড়িয়ে তা বিলক্ষণ জানেন শীর্ষ নেতৃত্বও।
আর তাই বারেবারে নানা সভায় সোনিয়া গান্ধী বা বরিষ্ঠ কংগ্রেসী নেতৃত্ব বলেছেন, কংগ্রেসকে বারবার ভাঙার চেষ্টা হয়েছে, ষড়যন্ত্র হয়েছে, তবুও কংগ্রেস ছিল, আছে ও থাকবে।
কেরলে কোন দল বা জোট ক্ষমতায় ফিরবে? কী বলছে সমীক্ষার ফলাফল?
অসমে কোন দলের দখলে যাবে বিধানসভা? জেনে নিন সমীক্ষার ফলাফল
কিন্তু ঘটনা হল, সারা দেশের রাজ্যগুলির প্রেক্ষিতে যে পরিসংখ্যান উঠে আসছে তাতে জাতীয় দল হিসাবেও কংগ্রেসকে কতোটা গুরুত্ব দেওয়া হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
অসম ও কেরল কংগ্রেসের হাতছাড়া হতে চলেছে
এই মুহূর্তে অসম, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, পণ্ডিচেরি ও কেরলের মতো রাজ্যে বিধানসভা ভোট সাঙ্গ হয়েছে। ফল জানা যাবে ১৯ মে। এর মধ্যে কেরল ও অসমে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। তবে ভোট পরবর্তী সমীক্ষা বলছে, এই দুটি রাজ্যই সম্ভবত হাতছাড়া হতে চলেছে কংগ্রেসের। অসমে সম্ভবত বিজেপি ও কেরলে বামেদের এলডিএফ জোট ক্ষমতায় ফিরবে।
অপেক্ষাকৃত ছোট ও কম গুরুত্বের পাঁচটি রাজ্যে ক্ষমতায় কংগ্রেস
এরপর বাকী রইল মাত্র ছয়টি রাজ্য যাতে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস সরকার। এই রাজ্যগুলি হল হিমাচল প্রদেশ, কর্ণাটক, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম ও উত্তরাখণ্ড। এর মধ্যে একমাত্র কর্ণাটক বাদে সবকটি রাজ্যই ছোট রাজ্য হিসাবে পরিচিত।
উত্তর-পূর্বের মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম রাজ্য মিলিয়ে সবমিলিয়ে মাত্র ১৬০টি বিধানসভা আসন। মণিপুরে ৬০টি আসন, মেঘালয়ে ৬০টি আসন ও মিজোরামে ৪০টি আসন। ফলে এই রাজ্যে দাপট থাকল কিনা তা দিয়ে দেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হওয়া কঠিন।
হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডেও কংগ্রেসের অবস্থা ভালো নয়
এরপরে বাকী রইল হিমাচল প্রদেশ (৬৮ আসন), উত্তরাখণ্ডের (৭১টি আসন) মতো রাজ্য। এগুলিও বিধানসভা আসন হিসাবে খুবই ছোট রাজ্য। আর দুটি রাজ্যেই কোনওমতে সরকার টিঁকে রয়েছে কংগ্রেসের। যা হাওয়া তাতে আগামী বিধানসভা ভোটে এই রাজ্যগুলিতেও কংগ্রেসের সরকার উল্টে যেতে পারে।
কর্ণাটকও হাতছাড়া হতে পারে কংগ্রেসের
এরপরে বাকী রইল সবচেয়ে বড় কংগ্রেস শাসিত রাজ্য কর্ণাটক। তবে এই দক্ষিণের রাজ্যের রাজনৈতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে বিজেপির দিকে ক্রমশ পাল্লা ভারী হচ্ছে। মোট ২২৫টি বিধানসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেসের দখলে রয়েছে ১২২টি আসন। তবে বেঙ্গালুরু পুরসভা কিছুদিন আগেই বিজেপি দখল করেছে। সেই সঙ্গে গোটা রাজ্য জুড়েই বিজেপি হাওয়া ক্রমেই ঘূর্ণাবর্তে পরিণত হচ্ছে। ২০১৮ সালে এই রাজ্যের সরকারও পালাবদলের পথেই সম্ভবত এগোতে চলেছে।
ফলে সারা দেশে কংগ্রেসের জন্য বাকী রইল কী? রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসকে নতুনভাবে সাজিয়ে দিশা দেখানোর যে প্রয়াস ও প্রক্রিয়া ২০১৪ লোকসভা ভোটের আগে থেকে শুরু হয়েছে কংগ্রেসে তা চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ঘটনা হল, তা থেকে শিক্ষা নেয়নি শীর্ষ নেতৃত্ব। বারবার তার প্রমাণ মিলেছে বিহার সহ একাধিক রাজ্যের নির্বাচনে।
ফলে রাজ্য শাসন দূর-অস্ত, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার লড়াই আগামিদিনে চালিয়ে যেতে হবে কংগ্রেসকে। সঠিক নেতৃত্ব ও সঠিক রাজনৈতিক দর্শনই দিশা দেখাতে পারবে কংগ্রেসকে। নয়তো শুধু ইতিহাসের পাতাতেই জায়গা পেতে খুব বেশি সময় লাগবে না শতাব্দি প্রাচীন দলটির।