চিনের ক্ষমতা নেই ভারতের অগ্রগতি আটকানোর, বলল খোদ সেদেশের সংবাদমাধ্যম
কয়েকদিন আগে যে চিনা সংবাদপত্রে ভারতের কড়া সমালোচনা ছাপা হয়েছিল, এবার তাতেই প্রকাশিত হল নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে ভারতের শ্রীবৃদ্ধি; সওয়াল কড়া হল এদেশে চিনা লগ্নির পক্ষেও
সম্প্রতি চিনের গ্লোবাল টাইমসে একজন ভারতীয় লেখকের কলমে ভারতকে সমালোচিত হতে দেখে আলোড়ন পড়ে যায় দেশ জুড়ে৷ বলা হয়, ভারতকে দুনিয়ার সমানে নিচু করতেই চিনের এই প্রয়াস ৷
গত শুক্রবার (অক্টোবর ২৮) গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভারতের প্রশংসা করে বলা ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি পশ্চিমী দুনিয়ার টানাপোড়েনে ক্লান্ত দুনিয়ার কাছে একটি সুসংবাদ৷
চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রাটেজির অ্যাসিস্ট্যান্ট রিসার্চ ফেলো জি চেং-এর লেখা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে ২০১৪ সালের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে ভারতের অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বিশ্বের নজর কেড়েছে ৷
বলা হয়েছে দুর্নীতি দমন, পুরোনো নিয়মনীতির অবসান এবং নানা অর্থ-সামাজিক সমস্যার মোকাবিলায় ভারতের বর্তমান শাসক যথেষ্ট প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে ৷
ভারতের এই উন্নতি দেখে কি চিনের উচিত নিজের বিভিন্ন ব্যবসার মূলকেন্দ্র ভারতে স্থানান্তরিত করার?
এই প্রশ্নটি এখন চিনের অন্দরমহলে ঘুরপাক খাচ্ছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনটি৷ তাতে বলা হয়েছে যে যারা এই মতটির বিপক্ষে, তাঁরা বলছেন ভারতে চিনা সংস্থাগুলি উৎপাদন শুরু করলে অচিরেই নিম্ন এবং মাঝারি শ্রেণীর পণ্য তৈরিতে স্থানীয় উৎপাদনকারীরা তাদের কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে ফেলে দেবে ৷
এবং তাতে উল্টে চিনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং ইউরোপের সংস্থাগুলির সঙ্গে উচ্চ শ্রেণীর পণ্য প্রস্তুতের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হবে৷ চিনের একটি অংশের ধারণা, এতে তাদের শ্যাম ও কূল দুইই যাবে৷
প্রতিবেদক অবশ্য এই মতে বিশ্বাসী নয়৷ তাঁর মতে, এই আশঙ্কা ভিত্তিহীন৷ বরং, চিনের উচিত ভারতে লগ্নি করা এবং তাতে আখেরে চিনেরই লাভ হবে৷
প্রতিবেদক বলেছেন ভারতে এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে বেশ কিছু বাধা দেখা দিয়েছে৷ মোদী যদিও 'মেক ইন ইন্ডিয়া' নামক উদ্যোগ নিয়েছেন এদেশের উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধি আনতে এবং তার জন্য বহুজাতিক সংস্থাদের আমন্ত্রণ জানানো ছাড়াও নতুন নীতিরও প্রণয়ন করেছে কিন্তু কৃষি, বিদ্যুৎ এবং শ্রম ক্ষেত্রে সেরকম কিছু এখনও অর্জন করে দেখতে পারেনি মোদী সরকার ৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মোদীর দল ভারতীয় জনতা পার্টির (প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ইন্ডিয়ান পিপলস পার্টি) যদিও সংসদের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, কিনতু তা উচ্চকক্ষে এখনও কমজোরি এবং তার ফলে এখনও অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ সফল হতে পারেনি ৷
তাছাড়া, প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে যে যেহেতু ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এখন কেন্দ্রের থেকে রাজ্যগুলির পাল্লা ভারী এবং শাসক দল বিজেপি এবং তার বিভিন্ন মিত্র দল মাত্র সারা ভারতে মাত্র কয়েকটি রাক্যেই ক্ষমতাসীন, তাই কেন্দ্র সরকারের পক্ষে সংস্কারগুলির বাস্তবায়ন বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷
'গত অর্থবর্ষে ভারতের উন্নতি ছিল চিনের চেয়েও বেশি '
গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনটিতে ভারতের অর্থনৈতিক উত্থানের ভূয়সী প্রশংসা করে বলা হয় ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে তার বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৬ শতাংশ যা চিনের চেয়েও বেশি ৷ রাজস্ব ঘাটতি বা মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রেও ভারতের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত, জানান চেং ৷ তিনি বলেন যদি ভারতের এই বৃদ্ধির হার যদি একই থাকে, তবে এ-দেশের বাজারে যে চিনা মূলধনের প্রবেশ ঘটেছে, তারও ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ৷
চেং বলেন যে ভারতে যারা লগ্নি করছেন, তাঁরা এ-দেশের উন্নতির থেকেও বেশি নিজেদের মুনাফার কথা বেশি ভাবেন ৷ ভারতে বিদেশি লগ্নির অনুকূল পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বিদেশি লগ্নিকারীরা এখন এদেশে ব্যবসা করতে উৎসাহিত এই কারণেই ৷ আর প্রতিবেদক সেই কথাটি মাথায় রেখেই ভারতে চিনা লগ্নির পক্ষে সওয়াল তুলেছেন ৷
'চিনের ক্ষমতা নেই ভারতকে আটকানোর'
চেং এও বলেন যে চিনের ক্ষমতা নেই ভারতের উৎপাদন শিল্পের অগ্রগতি আটকানোর ৷ চিন শুধু পারে ভারতে লগ্নি না করে তার এই শ্রীবৃদ্ধির আশীর্বাদ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে ৷ কিনতু সেটা চিনের পক্ষে মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না ৷