এই তাহলে আপনাদের গণতন্ত্র? মার্কিন নির্বাচনকে খোঁচা চিনা সংবাদমাধ্যমের
এবছরের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লাগামহীন বিতর্ক দেখে চিন যেন বলা যেতে পারে একটু যেন খুশিও। এ মাসের গোড়ায় চিনের গ্লোবাল টাইমস একটি সম্পাদকীয়তেএই নিয়েই মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থাকে একহাত নিয়েছে।
তাঁরা নিজেরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী নন। তাঁদের অর্থনৈতিক মডেলে একটুআধটু রদবদল ঘটলেও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কোনও বদল আজও আসেনি। আর তাই এবছরের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লাগামহীন বিতর্ক দেখে চিন যেন আরও চমৎকৃত, বা বলা যেতে পারে একটু যেন খুশিও।
এ মাসের গোড়ায় চিনের গ্লোবাল টাইমস একটি সম্পাদকীয়তে ("ইউএস ভোটিং সিস্টেমস মেরিট স্টার্টস টু ফেড" শীর্ষক) এই নিয়েই মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থাকে একহাত নিয়েছে।
"দুই পদপ্রার্থীই একে অপরকে যা-তা ভাষায় আক্রমণ করছেন। হিলারি ক্লিন্টন এবং তাঁকে সমর্থনকারী সংবাদমাধ্যম ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নানা কেচ্ছার কথা জনসমক্ষে নিয়ে আসছেন অথচ অন্যদিকে হিলারির নিজের ইমেল কেলেঙ্কারি তাঁর সততা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। দুই প্রার্থীর ভাবমূর্তিই যথেষ্ট খারাপ ," লিখেছে চিনা সম্পাদকীয়টি।
মার্কিন নির্বাচনী পদ্ধতিতেই গলদ, বলছে চিনা সম্পাদকীয়
আর এরপরেই মার্কিন নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে সংবাদপত্রটি। "হয়তো ব্যক্তিগতভাবে এই দুই প্রার্থী খারাপ নন; হয়তো বা নীতির প্রশ্নে আপসও করেন না। কিনতু জনসমক্ষে তাঁরা এত হিংস্র আচরণ করেন তার কারণ হয়তো তাঁদের দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা। একে অপরকে আক্রমণ করে তাঁরা আসলে মার্কিন জনমতকে প্রভাবিত করতে চাইছেন নির্বাচনটি জেতার জন্য," বলেছে গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়।
মার্ক টোয়েন এখনও চিনে জনপ্রিয়
চিনা সংবাদপত্রটি এখানেই থেমে থাকেনি। মার্কিন নির্বাচন প্রক্রিয়াতে বিষোদগারের রীতি এই প্রথমবার চাক্ষুষ করা গিয়েছে তা নয়, জানিয়েছে তা। শতাধিক বছর আগে প্রখ্যাত মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েন-এর রচিত "রানিং ফর গভর্নর" নামাঙ্কিত ছোট গল্পটির প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে এসে মার্কিন মুলুকে নির্বাচন নামে হওয়া "সন্দেহজনক" কারবারটির উপর প্রশ্ন তোলে চিনা সম্পাদকীয়টি। প্রসঙ্গত বলা চলে, টোয়েন-এর এই রচনার জন্যে চিনে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়।
সম্পাদকীয়টিতে বলা হয়: "বিংশ শতাব্দী জুড়ে দুনিয়া জুড়ে স্বৈরতন্ত্রের পতন বা পরিবর্তন হয়েছে। দুনিয়া জুড়ে প্রসারিত হয়েছে গণতন্ত্র। বিশ্বের বহু দেশই আজ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিনতু যাদের কাছ থেকে তা গৃহীত, সেই পশ্চিম বিশ্বে এই রাজনীতি আদতে হয়ে দাঁড়িয়ে ভোটে জেতার লড়াই; নীতির প্রশ্ন সেখানে গৌণ। তাও পশ্চিম দেশগুলিতে একটি বলিষ্ঠ আইনি ব্যবস্থা রয়েছে বলে রাজনীতির লড়াই খারাপ মোড় নিলেও সার্বিকভাবে সমাজে তার প্রভাব পড়ে না। কিনতু যে সমস্ত দেশগুলি সামাজিকভাবে তত মজবুত নয়, তারা এই পদ্ধতি আমদানি করে বিপদের সম্মুখীন হয়।"
"এবারের মার্কিন নির্বাচন সে-দেশের প্রধান বিনোদন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিনতু এই যে ক্রমাগত নিচে নামার প্রতিযোগিতা, এটা যেমন মানুষকে ঠকাচ্ছে, তেমনই তাঁদেরকে গণতন্ত্র সম্পর্কে দ্বিতীয়বার ভাবতেও শেখাচ্ছে। গণতন্ত্রকে আসলে কিভাবে চালাতে হয়, তার কোনও সদুত্তর এখনও পাওয়া যায়নি," বলেছে গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়।