ট্রাম্পের আমেরিকা পিছু হটতেই বিশ্ববাণিজ্য নিয়ে বিকল্প মতলব চিনের
ট্রাম্প ওবামার টিপিপি পরিকল্পনায় জল ঢালতেই নড়েচড়ে বসল চিন। পাল্টা বাণিজ্যিক মঞ্চের পরিকল্পনা জানিয়ে আমেরিকার প্রভাব খর্ব করার উদ্দেশ্য পরিষ্কার করল।
রাজনীতিতে, তা আন্তর্জাতিক হলেও, শূন্যতা যে স্থায়ী হয় না তা আরও একবার প্রমাণিত হল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা চিনকে কোনঠাসা করতে যে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপের (টিপিপি) পরিকল্পনা করেছিলেন তাতে তাঁর উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প আপত্তি জানাতেই চিন পাল্টা উদ্যোগ নিল একইরকমের পরিকল্পনার ওই অঞ্চলে আমেরিকার 'নাক গলানি'র মোকাবিলা করতে।
শনিবার (নভেম্বর ১৯) পেরুর রাজধানী লিমাতে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন বা আপেক শীর্ষসম্মেলনে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ টিপিপি-র বিকল্প একটি বাণিজ্যিক মঞ্চ তৈরি করার ভাবনাচিন্তা প্রকাশ করতেই চিনের রাষ্ট্রপতি জি জিনপিং তাদের এব্যাপারে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন, জানা গিয়েছে রয়টার্স সংবাদ সংস্থা সূত্রে।
ওবামা টিপিপি নিয়ে এগোলেও পরে তিনি এই ১২-দেশীয় চুক্তিটিকে মার্কিন কংগ্রেসের থেকে অনুমোদিত করার ব্যাপারে আর এগোননি। আর যেহেতু মার্কিন অনুমোদন ছাড়া চুক্তিটি সম্পাদিত হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই, তাই টিপিপি-র ভবিষ্যৎ বলে আর কিছু নেই ধরেই বিকল্পের কথা ভাবছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলি।
আর এই সুযোগেই চিন তার রিজিওনাল কম্প্রিহেন্সিভ ইকনোমিক পার্টনারশিপ বা আরসেপ মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। লক্ষ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব করে তাদের ওই অঞ্চল থেকে দূরে রাখা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ট্রাম্প প্রথম থেকেই টিপিপি এবং উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (সংক্ষেপে নাফটা)-র ঘোরতর বিরোধী। এইগুলির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের হার মার খাচ্ছে বলে তাঁর অভিমত। নিজের প্রচারে ট্রাম্প জানান যে টিপিপি বাতিল করার পাশাপাশি চিন এবং মেক্সিকো থেকে আমদানি করা সামগ্রীর উপরেও তাঁর প্রশাসন শুল্ক লাগু করবে।
এদিনের আপেক মঞ্চে ওবামার সঙ্গে দেখা করে জি জানান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক এই মুহূর্তে একটি সূক্ষ্ম অবস্থায় রয়েছে এবং আশা করেন যে ওয়াশিংটনে ক্ষমতার হস্তান্তর মসৃণভাবেই হবে।
লিমাতে জি এও জানান যে বেজিং কোনওভাবেই বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করবে না। বরং যাতে উন্নয়নের ফলের সমান ভাগীদার হয় সবাই, সেটাই তারা দেখবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি আগামী দিনে নিজেকে দুনিয়া থেকে ছিন্ন করার নীতি (আইসোলেশনিজম) নেয়, সেক্ষেত্রে চিন অগ্রণী ভূমিকা নেবে বলেও জানানো হয় শীর্ষসম্মেলনে।
অবশ্য মার্কিন প্রশাসন যে চিনের এই উদ্যোগকে খুব ভালো চোখে দেখছে না, প্রমাণ হয়েছে সেটাও। রয়টার্স জানিয়েছে যে ওবামা প্রশাসন আরসেপ-এর সম্পর্কে খুব আশাবাদী নয়। শ্রমিক নিরাপত্তা, পরিবেশ বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ইত্যাদি বিষয়ে আরসেপ খুব কার্যকরী নয় বলেই জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
পেরু সফরই ওবামার রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেষ বিদেশ সফর।
অবশ্য শেষবেলাতেও ওবামা আপেক-এর বিভিন্ন দেশের নেতৃত্বের কাছে আর্জি জানান টিপিপিকে বাস্তবায়িত করার একটি উদ্যোগ নিতে।