বর্ধমান-কাণ্ড: অবৈধ মাদ্রাসায় বসেই দেশবিরোধী কার্যকলাপের ছক
সূত্র অন্ধ্রপ্রদেশেও
বিভিন্ন সূত্র সন্ধান করে দেখা যাচ্ছে যে, অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুমালাতেও বর্ধমানের কায়দায় জমি কেনা হয়েছিল। সেই জমিতে গড়ে উঠেছিল একটি মাদ্রাসা। প্রসঙ্গত, এনআইএ তাদের তদন্তের সূত্রে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কাছে কিছু তথ্য চেয়ে পাঠাবে। কারণ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বর্ধমান-কাণ্ডে অভিযুক্তদের কাছ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা লেনদেনের কথা জানতে পেরেছে। যদিও এই টাকা কোথা থেকে এল, তার সদুত্তর ইডি-কে দিতে পারেনি অভিযুক্তরা।
বর্ধমান বিস্ফোরণের সূত্র ধরে অবৈধ মাদ্রাসাগুলির ওপর নজরদারি শুরু হয়েছে। এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গে সীমাবদ্ধ নেই। বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশের অবৈধ মাদ্রাসাগুলির ওপরও নজর রাখা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসনও জড়িত
বর্ধমান-কাণ্ডের সূত্রে জঙ্গিদের মোডাস অপারেন্ডি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া গিয়েছে। শুধু বেসরকারি জমি নয়, এরা সরকারের অর্থাৎ খাস জমিতেও বেআইনি মাদ্রাসা তৈরি করছে। দেখা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদ ও মালদায় ৩০ একর জমি বেআইনিভাবে নিয়েছিল জামায়-উল-বাংলাদেশ জঙ্গি সংগঠনটি। এখানে এরা জঙ্গি গড়ার প্রশিক্ষণ দিত।
গোটা পদ্ধতি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য তারা স্থানীয় প্রশাসনকে পকেটে পুরে নিয়েছিল। জঙ্গিরা ভেবেছিল, সরকারি জমিতে নিজেদের কার্যকলাপ চালিয়ে গেলে কেউ সন্দেহ করবে না। পাশাপাশি, বেআইনিভাবে গজিয়ে উঠলেও কেউ তা ভাঙতে সাহস করবে না সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কথা মাথায় রেখে।
এনআইএ তাদের তদন্তে জানতে পেরেছে, মুর্শিদাবাদে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু সদস্য জঙ্গিদের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল। তারা অভিযুক্তদের বরাবর সাহায্য করে এসেছে। আজ গত কয়েক মাসের ঘটনা নয়, ২০১০ সালের শেষ থেকেই শুরু হয়েছে।
সন্ত্রাসের ব্লু-প্রিন্ট
সন্ত্রাসের পরিকল্পনা খুবই ভেবেচিন্তে করা হয়েছে। প্রথম ২০১০ সালে পরিকল্পনা করা শুরু করে তারা। স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া (সিমি)-র নেতাদের সাহায্যে তারা স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে দহরম-মহরম শুরু করে। সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশ হয়ে টাকা ঢুকতে থাকে পশ্চিমবঙ্গে।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের অন্যান্য প্রান্তে এই অবৈধ টাকা ছড়িয়ে পড়েছে। যে লোকটি জমি চিহ্নিত করে তাতে মাদ্রাসা বানাতে সিদ্ধহস্ত ছিল, সেই শাকিল আহমেদ মারা গিয়েছে বিস্ফোরণে। টাকা লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে কওসর, যে এখনও ফেরার বিস্ফোরণের পর থেকে।
নারীশক্তি
এনআইএ বলছে, তারা মালদা, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়াতে বোমার কারখানা বানাচ্ছিল। পরিকল্পনা ছিল, সব মিলিয়ে এই কারখানাগুলি থেকে বছরে অন্তত ৫০০ বোমা তৈরি করা যাবে। গোটা অপারেশনে ২৫ জন মহিলা ছিল। এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
মহিলাদের দলে নেওয়ার অর্থ হল, সন্দেহ এড়ানো। যে ২৫ জন মহিলাকে দলে নেওয়া হয়েছিল, তাদের আটজনই ছিল ফিদায়েঁ আক্রমণ চালানোর ব্যাপারে প্রশিক্ষিত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ৪৫০০টি অবৈধ মাদ্রাসা রয়েছে। এই মাদ্রাসাগুলির অধিকাংশ গজিয়ে উঠেছে সরকারের খাস জমিতে। আর এখান থেকে দেশবিরোধী কার্যকলাপ চালানো হত।