বর্ধমান বিস্ফোরণ রহস্যভেদ : ভারতে থেকে বাংলাদেশ কীভাবে বোমা সরবরাহ হত
তদন্ত আধিকারিকদের খবরীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দু'বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে বোমা তৈরির কাজ চলছিল। সীমান্ত অঞ্চল হয়ে বোমার ৫ টি আলাদা আলাদা 'কনসাইনমেন্ট' বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অনুমান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তারক্ষীদের ঘুষ দেওয়া হয়েছে
তদন্তকারীদের কথায়, এই সবকটি 'কনসাইনমেন্ট' মিলে প্রায় ৬০টি মতো বোমা ছিল। এই বোমাগুলির মধ্যে যেমন অশোধিক বোমা রয়েছে তেমনই রয়েছে অত্যাধুনিক মানের বোমা। এই বোমাগুলি সরানোর ক্ষেত্রে কওসর এবং শেখ ইউসুফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
এই বোমা সরানোর সময় স্থানীয় বেশ কিছু সংস্থার সহায়তা চেয়েছিল তারা। এমনকী এই 'কনসাইনমেন্ট'-গুলি সরানোর সময় সীমান্তে নিরাপত্তারক্ষীদের ঘুষ দেওয়া হয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
আর এক বছরের মধ্যে এক গুচ্ছ আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়েই ভিন্ন ভিন্ন 'কনসাইনমেন্টে' বোমা পাচার করা হয়েছিল। বাংলাদেশী প্রশাসনকে আক্রমণ করতে ৩০০টি পর্যন্ত বোমা এবং হ্যান্ড গ্রেমেজ পৌঁছে দেওয়াটাই আসল পরিকল্পনা ছিল।
জঙ্গী হামলার ক্ষেত্রে এই জঙ্গী গোষ্ঠীগুলি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল
বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তে নেমেছে এনআইএ। এনআইএ-র কথায়, গত চার বছর ধরে জেএমবি নিজেদেক কার্যকলাপ ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে পশ্চিমবঙ্গে। অন্য কোনও মডিউল গঠনের ক্ষেত্রে তাদের কোনও পরিকল্পনা ছিল না। এর অর্থ হল তাদের পরিকল্পনা তৈরি ছিল। এক্ষেত্রে তাদের শুধু বোমা তৈরি করতে হত এবং তা বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে হত।
তারা তাদের পরিকল্পনার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু বড়সড় নাশকতায় সাফল্য পাওয়ার আগেই বর্ধমানে ভুলবশত বোমা বিস্ফোরণ হয়ে যাওয়ায় সে পরিকল্পনায় জল পড়ে।
সমস্ত জঙ্গী মডিউল বিচ্ছিন্ন করতে এনআইএ-র পরবর্তী পরিকল্পনা কী?
এনআইএ-র কথায়, এই ঘটনার তদন্ত চলাকালীন, তাদের প্রাধান্য ছিল এই সমস্ত জঙ্গী মডিউল ধাপে ধাপে বিচ্ছিন্ন করা। ইন্টালিজেন্স ব্যুরো (আইবি) আধিকারিকদের কথায়, "জেএমবি-র সঙ্গে স্থানীয় যোগসূত্রগুলি খোঁজার চেষ্টা করছিলাম আমরা। একইসঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত সমস্ত ব্যক্তিদেক শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে এই সমস্ত মডিউলগুলিতে আমরা চিরতরে সরিয়ে দেওয়া এবং তারা যাতে ফিরে আসতে না পারে তা নিশ্চিত করা।"
আইবি আধিকারিকদের কথায়, জেএমবি পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা ঠিকই করবে, কারণ এই ধরণের মডিউলগুলি তৈরি করতে প্রচুর সময় ও সম্পদ খরচ করেছে তারা।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল গত সোমবার বর্ধমান পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনিও এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এই মডিউলগুলি বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে রাজ্য-কেন্দ্র উভয়ের পরস্পর সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।