বর্ধমান বিস্ফোরণ : জেএমবির পুনরুত্থানে ভারতের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সাম্রাজ্যের পতন ঘটনোই জেএমবি-র একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল
গোয়েন্দা আধিকারিকদের দলিলে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছিল। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনকাল ভেঙে চুরমার করে দেওয়াই এই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্য ছিল। ২০০৬ সালে জেএমবি-কে দমন-পীড়নের পক্রিয়া চালানোর পরে দুর্বল হয়ে পড়ে জেএমবি। মডিউলের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় হাতে গোনা। এরপরই জেএমবি সদস্যরা বুঝতে পারে বাংলাদেশে থেকে তাদের এই যুদ্ধ স্বাধীনভাবে চালানো সম্ভব হবে না। তাই তারা বাংলাদেশ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে বাংলা ও অসমকে ঘাঁটি বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে লস্কর ও আল কায়েদা জেএমবি-র দিকে সাহায্য়ের হাত বাড়িয়ে দেয়। তারা ঠিক করে এই যুদ্ধ এবার সরাসরি বাংলাদেশী প্রশাসনের সঙ্গে হবে। নিস্পাপ সাধারণ মানুষের উপর যেন এই যুদ্ধের প্রভাব না পড়ে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে চায় জেএমবি।
সন্ত্রাসবাদীরা চেয়েছিল বাংলাদেশ প্রশাসনকে আঘাত করতে, সাধারণ মানুষকে নয়
সন্ত্রাসবাদীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে তাদের নিশানায় থাকবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ প্রশাসন, সাধারণ মানুষরা নয়। সাধারণ মানুষকে টার্গেট করলে যে স্থানীয় সমর্থনটা পুরোপুরি হারাতে হবে তা বেশ ভালভাবেই বুঝেছিল জেএমবি। এরকম পরিস্থিতিতে কোনও মূল্যেই স্থানীয় সমর্থন খোয়াতে প্রস্তুত ছিল না তারা। সাধারণত অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীরা যে ভুল করে জেএমবি সে ভুলের পথে হাঁটতে চায়নি।
আহলে হাদিত, ইসলামি ছাত্র শিবির এবং জামাত-এ-ইসলামির সহযোগিতায় একই কায়দায় নিয়োগ শুরু করে জেএমবি। পশ্চিমবঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে সাহায্য করে জামাত-এ-ইসলামি। সিমির সঙ্গে যুক্ত থাকায় জামাত-এ-ইসলামির পক্ষে সেই কাজটা খুব একটা কঠিন ছিল না। নতুন নিয়োগ করা সদস্যদের দলের আদর্শ বোঝানোয় সাহায্য করত আহলে হাদিত।
জেএমবি-র পুনরুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন মহিলারা
জেএমবি-র পুনরুত্থানে মহিলা কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তারা এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল যে সমস্ত মডিউল পরিবারের মধ্যে দিয়ে যোগাযোগ স্থাপন করবে। জেএমবির এই পরিকল্পনার পিছনে একটিই পরিকল্পনা ছিল যে কাজের পদ্ধতি যাতে ঐক্যবদ্ধ হয়। পরে অবশ্য জেএমবি সদস্যদের অন্য সমাজের মহিলাদের সঙ্গে বিয়ে করতে পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে পরিবার বৃদ্ধি পাশাপাশি জেএমবির সদস্য সংখ্যাও বৃ্দ্ধি পায়।
ভুয়ো মুদ্রার যোগ
ভুয়া মুদ্রা চক্র জেএমবি-র তহবিল গঠনেক আর একটি সূত্র ছিল। ইডি এই গোটা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। ২০০৭-০৮ সাল এই সময়টায় সন্ত্রাসবাদীদের তহবিল গঠনের প্রধান সূত্র ভুয়া মুদ্রাই ছিল বলেই অনুমান আইবি আধিরকারিকদের। নিজেদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য লস্করে তৈবার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল জেএমবি। পাকিস্তান থেকে লস্করে তৈবা ভুয়া মুদ্রা জেএমবি সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিত। সেখানে থেকে তা সহজেই ভারতে ছড়িয়ে দেওয়া হত।
অনুপ্রবেশকারীদের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিত জেএমবি
বাংলাদেশে দারিদ্র ও অভাবের কারণে চাকরির আশায় যাঁরা ভারতে অনুপ্রবেশ করত তাদের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিত জেএমবি। এই অনুপ্রবেশকারীদের বলা হত ভুয়া মুদ্রা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে। তারপর তা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্বও তাদেরই দেওয়া হত। এর পর নিয়ম নীতি আরও জোরদার হওয়ায় তখন হুন্ডি কার্যকলাপের উপরই নির্ভরযোগ্যতা বাড়ল।
জেএমবি এবং পশ্চিমবঙ্গের সরকারি আধিকারিকদের লেনদেন
বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে নেমে আইবি এও জানতে পেরেছে যে এই টাকা পশ্চিমবঙ্গে সরকারি জমিতে মাদ্রাসা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। সরকারি জমিতে এই বেআইনি মাদ্রাসা তৈরি করার জন্য স্থানীয় সরকারি আধিকারিক এবং জেএমবি সদস্যদের মধ্যে লেনদেনও হয়েছে বলে সূত্রের তরফে জানানো হয়েছে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন গ্রাম পঞ্চায়েত এবং এলাকার কাজে ঢোকার চেষ্টাও চালিয়েছিল জেএমবি। তাদের কাছে কাছে এমন বহু মিথ্যা নথি ছিল যা দিয়ে প্রমাণ হয় তারা ভারতীয়।