ব্রেক্সিট: গণভোটের রায়ের পরে আদালতের প্রশ্ন অস্বস্তিতে ফেলল মে সরকারকে
ব্রিটেনের উচ্চ আদালত জানিয়েছে ব্রেক্সিটকে বাস্তবায়িত কোর্টে হলে সে-দেশের সরকারকে পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে; আদালতের এই পদক্ষেপ কি খর্ব করল ব্রিটেনের গণতন্ত্রকে, প্রশ্ন উঠছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরোনোর জন্য হাঁকপাঁক করতে থাকা ব্রিটেনের কাছে এ এক বড় ধাক্কা। গত বৃহস্পতিবার (নভেম্বর ৩) সে-দেশের তিন বর্ষীয়ান বিচারক এদিন বলেন যে গত জুন মাসে ব্রিটেনের জনগণ ব্রেক্সিট-এর পক্ষে রায় দেওয়াটাই শেষ কথা নয়। এই বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-কে তাঁর দেশের পার্লামেন্ট থেকেও অনুমোদন পেতে হবে।
এ পর্যন্ত মে বলে এসেছিলেন যে ২৩ জুনের ঐতিহাসিক গণভোটে ব্রেক্সিট-এর পক্ষে ব্রিটেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ রায় দেওয়ার পরে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আর কোনও দ্বিমত তাঁর দেশের নেই। কিনতু উচ্চ আদালতের এই রায়ের পরে মে-কে সবকিছু নতুন করে ভাবতে হবে। ইইউ-র লিসবন চুক্তির ৫০ নম্বর ধারা অনুযায়ী ব্রেক্সিট লাগু করতে মে-কে পার্লামেন্টের সমর্থন আদায় করতে হবে। অর্থাৎ, ব্রেক্সিট-এর জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে যে দু-বছর সময় রয়েছে, তার মধ্যে তাকে দেশের অভ্যন্তরেও আরও সমর্থন আদায় করতে হবে ব্রেক্সিট-এর ব্যাপারে।
মে-র আসন্ন ভারত সফরের আগে আদালতের এই রায় নিঃসন্দেহে তাঁর কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এই রায়ের পরে বিদেশ সফরকালীন প্রধানমন্ত্রী মে-কে ব্রেক্সিট-এর বিষয়ে তাঁর দেশের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তাতে ব্যাহত হতে পারে অন্যান্য দেশের সঙ্গে ব্রিটেনের নিজস্ব বাণিজ্য বা অন্যান্য নানা সমঝোতাও।
ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা বয়ে গিয়েছে ব্রিটেনের রাজনীতিতে। একজন প্রধানমন্ত্রীকে যদি ছাড়তে হয়েছে, কোন্দলে জর্জরিত হয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি। এবার পার্লামেন্টের সমর্থন পাওয়া নিয়েও যে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে প্রধানমন্ত্রী মে-কে, সে-বিষয়ে কোনওই সন্দেহ নেই।
তবে এই প্রশ্নও উঠছে যে আদালতের এই রায় কি আদতে ব্রিটেনের সাধারণ মানুষের কণ্ঠকে অর্থাৎ সে-দেশের গণতন্ত্রকেই খর্ব করল? যেখানে ব্রিটেনের ১৭৪ লক্ষ মানুষ ব্রেক্সিট-এর পক্ষে রায় দিয়েছেন, সেখানে তিনজন বিচারক সেই রায় বাস্তবায়িত করার পথে অন্তরায় কি হতে পারেন?
ব্রিটেনের 'ডেইলি মেল' পত্রিকার একটি সম্পাদকীয়র মতে আদালতের এই পদক্ষেপ যথেষ্ট উদ্বেগজনক, বা বলা চলে রীতিমতো "আগুন নিয়ে খেলা"।
"এই রায়ের ফলে জনমানসে এই ধারণাই আরও বদ্ধমূল হবে যে পশ্চিমী দুনিয়ায় জনসাধারণ এখন ক্ষমতাশালী শ্রেণির হাতের পুতুল মাত্র। সাধারণ মানুষ নয়, প্রভাবশালীরাই শেষ কথা বলে," মন্তব্য সম্পাদকীয়টির।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবছরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থানের বিষয়টির কথাও বলা হয় সম্পাদকীয়টিতে। সেখানেও ট্রাম্প আসলে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার প্রতীক।
যদিও বিচারকরা জানিয়েছেন যে তাঁদের অবস্থানটি সম্পূর্ণ আইনি এবং ব্রেক্সিটের নৈতিকতা নিয়ে তাঁরা ভাবিত নন। 'ডেইলি মেল'-এর সম্পাদকীয়টিও বলেছে যে সরকারেরও আগে পার্লামেন্টের অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন ছিল কিন্তু একবার যখন জনগণের কোর্টে বল ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তখন ফের পিছু হাঁটা কেন?
"ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলি যখন অন্তর্কলহে দীর্ণ, তখন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জনগণের উপরেই সমাধানের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেই সিদ্ধান্ত তাঁর একার ছিল। সরকার এবং বিরোধীপক্ষ একজোটে ক্যামেরনের গণভোট করানোর দায়িত্বকে সমর্থন জানায়। এবং এই গণভোটের রায় যাই হোক, তা তাঁদের কাছে যে শিরোধার্য সেটাও তাঁরা জানতেন," বলেছে সম্পাদকীয়টি।
সেই জনগণ তাঁদের সিদ্ধান্ত শোনানোর পর এখন আদালতের এই রায় কি ব্রিটেনে সাংবিধানিক সঙ্কট ডেকে আনবে, প্রশ্ন এখন সেটাই।