মিশন টোয়েন্টি- টোয়েন্টি ওয়ান, তৃণমূলের প্রবলতর প্রতিপক্ষ হবে বিজেপি
মিশন টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ওয়ান। বিজেপি-র লক্ষ্য দ্বিতীয় স্থান। মিশন টোয়েন্টি-টোয়েন্টি সিক্স। লক্ষ্য রাজ্যের ক্ষমতা। সেই পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছে বিজেপি। এখনই ক্ষমতায় আসার জন্য হাঁকপাঁক না করে, ভিত গড়ার কাজে নেমে পড়েছে তারা। সংগঠন মজবুত করায় নজর দিয়েছে। মাঠে নামিয়ে দিয়েছে বেনামে থাকা সংঘ সংগঠনগুলোকে। তাই এমনটা অস্বাভাবিক হবে না, যদি ২০২১-এ বিজেপি বিরোধী দল হয়ে যায় আর ক্ষমতার দিকে এক পা এগিয়ে রাখে বিজেপি। এরপর ২০২৬-এ ক্ষমতায় এসে মিশন বাংলা সফল। এখন খুব সন্তর্পণে তৃণমূলকে এক নম্বর রেখে দ্বিতীয় স্থানের জন্য সিপিএম তথা বামফ্রন্টের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছে।
অঙ্ক কষেই এগোচ্ছে বিজেপি। সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেস এখনও বামেদের প্রধান শত্রু হিসাবে গণ্য করেই এগোচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক মহল অন্যরকম ভাবছে। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এখন সিপিএম নয়, তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপিই। সাদা চোখে মনে হবে সিপিএমই তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ। বিশেষ করে নির্বাচনের ফলাফল তা-ই স্পষ্ট করেছে। কারণ, এবার নির্বাচনে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৪৪.৯ শতাংশ। সেখানে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার ১০.২ শতাংশ। ৩৪.৭ শতাংশ ভোটে পিছিয়ে রয়েছে বিজিপি।
যাদের ভালো করে কোমরই শক্ত হয়নি, তারা শাসকদলের সঙ্গে টক্কর দেবে কীভাবে? এ প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু তবু অদূর ভবিষ্যতে বিজেপির প্রসার লাভের সম্ভবনা রাজ্যের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে অনেক বেশি। বিশেষত বিজেপি রাজ্যে যে খেলাটা শুরু করেছে, তা ভয়ংকর। রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, মোদি-মমতা সখ্যতা আন্ডার কারেন্টের মতো বইছে। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। অলিখিত চুক্তি এরকম, দিল্লি ও রাজ্য বিপদে-আপদে পরস্পরের পাশে দাঁড়াবে।
নেপথ্যে আছে এক ভয়ংকর হিসাব। বিজেপি রাজ্যকে বুঝিয়েছে, তোমার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বামেরা। আমাদেরও তাই। এখানে আমাদের দুই দলেরই অভিমুখ এক। তৃণমূলও দেখল, সত্যিই তো! তারা পেয়েছে ২ কোটি ৪৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ভোট। বাম-কংগ্রেস জোট পেয়েছে ২ কোটি ১৬ লক্ষ ভোট। তফাৎ সামান্যই। যে কোনও সময় ঘুচে যেতে পারে। এই ভোটে বামেদের প্রাপ্ত ভোটের হার ২৫.৬, কংগ্রেসের ১২.৩ শতাংশ। তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৪৪.৯ শতাংশ। অতএব বাম ও তৃণমূলের ফারাক মাত্র ১৯.৩ শতাংশ। অতএব বাম ও তৃণমূলের ফারাক মাত্র ১৯.৩ শতাংশ।
বামেরা যদি হাওয়া ঘোরাতে পারে তাহলে ওই ১৯ শতাংশের ব্যবধান ঘুচিয়ে দিতে পারবে। অতএব বামেদের সংখ্যা কমাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী শক্ত হাতে দমন করার চেষ্টা করলেও, বামেদের পার্টি অফিস ভাঙা, পোড়ানো, সন্ত্রাস, পঞ্চায়েত ও পুরসভায় ঘোড়া কেনাবাচা, বোর্ড দখলের রাজনীতি চলছেই। যদিও আপেক্ষিক, বামশক্তি কিছুটা হলেও কিন্তু কমছে। অবস্থার প্রেক্ষিতে বা ভয়ে অনেকে শিবির বদলে বাধ্য হচ্ছে। আপাতত শূন্যতা তৈরি হচ্ছে সিপিএমে। আর সেই শূন্যতা ভরাতে মরিয়া হয়ে উঠছে বিজেপি. তাতে বিজেপি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই ২০২১-এ বিজেপি বিরোধী দল হয়ে গেলে, তা অস্বাভাবিক কিছু হবে না। ক্ষমতার দিকেও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। ২০২৬-এ ষোলো কলা পূর্ণ! ক্ষমতায় চলে এল বিজেপি।
পক্ষান্তরে ছবিটা দেখা যাক। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার এবং শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ না থাকায় শাসকদল ও সরকারে বিশৃঙ্খলা বাড়বে, দুর্নীতি বাড়বে। তাতে তৃণমূলের ভিত আলগা হবে। এটা বিজ্ঞানের নিয়মেই হবে। তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়স হচ্ছে। সেই উদ্যোমে ও কর্মক্ষমতা থাকবে না। তৃণমূলে মমতা এক ও অদ্বিতীয় মুখ। দলের সেই মুখ শ্লথ হয়ে গেলে দলের ভিত নড়বড়ে হবেই। কংগ্রেসকে যদি আপাত সাইড লাইনে রাখা যায়, তাহলে বাকি থাকছে বামেরা।
যারা বিজেপি ঘোষিত শত্রু। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে তা প্রামাণিত। বামেরা দুর্নীতি করেছে, সন্ত্রাস করেছে ঠিকই। রাজ্যবাসী পাশাপাশি এটাও জানে, বামেদের সঙ্গে বিজেপির কোনও দিন সমঝোতা বা আপোশ হবে না। বিজেপির বিরুদ্ধে জবরদস্ত লড়াই যদি দিতে হয়, বামেরাই তা দিতে পারে। তাই বিজেপি চাইবে তাদেরও ঘোষিত শত্রু বামেরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক।
তৃণমূলের হাতে যেহেতু পুলিশ-প্রশাসন ওরাই নিশ্চিহ্ন করণটা সুন্দর করতে পারবে। তাই-ই হচ্ছে। তৃণমূলকে দিয়ে বামেদের খতম করার পর সময় মতো তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মই সরিয়ে নিলেই হবে। সেই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের একার পক্ষে বিজেপি তথা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়া সম্ভব হবে না। বামেরা নিশ্চিহ্ন হলে, বিজেপির সামনে থাকবে শুধু বল আর গোলপোস্ট। তৃণমূলকে, স্বয়ং দলনেত্রীকেও এটা ভাবতে হবে। ক্ষমতায় বসে থাকা বা ফিরে আসার জন্য বিজেপিকে আড়ালে রাখলে, গৌন মনে করলে ভুল করা হবে। তাই আগামীদিনে বিজেপিই হতে চলেছে তৃণমূলের প্রবলতর প্রতিপক্ষ। বামেরা নয়, রাজ্যে তৃণমূলের পর বিজেপিই হবে দ্বিতীয় রাজনৈতিক দল।