ফিলিপিন্সের পরে এবার মালয়েশিয়াও ঝুঁকল চিনের দিকে? ওয়াশিংটনের এশিয়ার 'পিভট' নীতির কাছে এ আরেক ধাক্কা
দুতার্তে আগেই করেছিলেন, এবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকও ঝুঁকলেন চিনের দিকে; রাষ্ট্রপতি ওবামার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে কি তাঁর এশিয়া 'পিভট' নীতিও অস্তমিত হতে চলল?
ফিলিপিন্সের পরে কি এবার মালয়েশিয়াও?
গত মঙ্গলবার (নভেম্বর ১) সেদেশের প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সাত দিনের চিন সফর শুরু হয়। কুয়ালা লামপুর এবং বেজিং-এর মধ্যে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক যুক্তি তো আছেই, কিনতু নাজিবের এই চিন সফরের আসল তাৎপর্য হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বদলে সঙ্গে মালয়েশিয়ার ক্রমবর্ধমান ব্যবধান যার ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে আরও একটু খর্ব হতে পারে ওয়াশিংটনের চিন-বিরোধী নীতি।
এর আগে ওই অঞ্চলে আমেরিকার আরেক পুরোনো মিত্র ফিলিপিন্স তার নতুন রাষ্ট্রপতি রড্রিগো দুতার্তের নেতৃত্বে চিনের দিকে ঝুঁকে ওয়াশিংটনের চিন্তা বাড়িয়েছে। চিন সফরে গিয়ে আমেরিকার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কোথাও ঘোষণা করেন দুতার্তে। এও বলেন যে তিনি এরপর রাশিয়াতে গিয়ে পুতিনের সঙ্গে দেখা করে জানাবেন মস্কো-বেজিং-ম্যানিলা অক্ষের প্রস্তাব রাখবেন। পরে যদিও বিশেষজ্ঞমহল জানায় যে দুতার্তের আসল লক্ষ্য ছিল মার্কিন দেশের মুণ্ডুপাত করে চিনের থেকে যতটা সম্ভব সুবিধে আদায় করা।
দুতার্তে পরবর্তীকালে দেশে ফিরে নিজের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার মন্তব্যটির বিষয়ে পিছু হঠলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে যে চিন কৌশলগত ভাবে মার্কিনিদের চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে আস্তে আস্তে তা বুঝতে অসুবিধে হয় না।
প্রধানমন্ত্রী নাজিবও কি সেইদিকেই এগোচ্ছেন? তিনি সরকারি সংবাদ সংস্থা জিনহুয়াকে জানিয়েছেন যে তাঁর সফরের সময়েই মালয়েশিয়া এবং চিন তাঁদের মধ্যে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদিত করবে। গত বুধবার (নভেম্বর ৩) এই দুই দেশের মধ্যে সাক্ষরিত হয় ১৪টি চুক্তি তার মিলিত মূল্য ৩৪ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারেরও বেশি বলে জানিয়েছে চিনের গ্লোবাল টাইমস।
চিন এগোচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পিছোচ্ছে
গত সপ্তাহে নাজিব এও বলেন যে তাঁর দেশ এবং চিন দু'পক্ষই সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগ নিতে উৎসাহী, জানিয়েছে এপি-র একটি প্রতিবেদন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতির বিশ্লেষক ব্রিজেট ওয়েলস-এর মতে, মালয়েশিয়ারও এই চিনের প্রতি ঝোঁকা প্রমাণ করে যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে এখন চিনের প্রভাব বাড়ছে আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমছে, জানিয়েছে এপি-র প্রতিবেদনটি।
বেজিং-এর তরফ থেকেও কুয়ালা লামপুরের এই পদক্ষেপকে অভিবাদন জানানো হয়েছে। নাজিব চিনের শীর্ষ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করছেন যার মধ্যে দিয়ে বোঝা যাচ্ছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাঁর এই সফর।
নাজিবের চিনের প্রতি আকর্ষণ অবশ্য অবাক করার মতো কিছু নয়। ১৯৭৪ সালে নাজিবের প্রয়াত পিতা এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আব্দুল রাজাকের নেতৃত্বেই প্রথম বেজিং এবং কুয়ালা লামপুরের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে নাজিবের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে
২০০৯ সালে যখন নাজিব মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন, তখন কিনতু কিনতু তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে বনধুত্বের হাতি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিনতু পরবর্তীকালে নাজিব দ্বারা গঠিত একটি রাষ্ট্রীয় লগ্নি সংস্থাকে ঘিরে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে এই অভিযোগে জড়ানো হলে কুয়ালা লামপুর এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কে তিক্ততা শুরু হয়।
এছাড়া ওয়াশিংটনকে মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারেও নাক গলানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। পাশাপাশি, চিনের সঙ্গে মালয়েশিয়ার বাণিজ্যগত সম্পর্ক বৃদ্ধি হওয়ার কারণে কুলাল লামপুর এবং বেজিং-এর মধ্যে সখ্য আরও দৃঢ় হয়।
ব্রিজেটের মতে ভূ-কৌশলগত কারণ তো আছেই, তাছাড়া মালয়েশিয়ার এখন অর্থনৈতিকভাবেও সাহায্য প্রয়োজন এবং এই মুহূর্তে সেই ভূমিকা চিনের থেকে ভালো আর কেউ পালন করতে পারবে না। পরিকাঠামোগতভাবেও চিন মালয়েশিয়াতে অনেক প্রকল্প তৈরী করার বরাত পেয়েছে যার মধ্যে দিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরপি জোরালো হবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
তবে এই সমস্ত সাহায্যের বিনিময়ে মালয়েশিয়া দক্ষিণ চিন সাগর বিতর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে রেখে চিনের পাশে দাঁড়াবে কিনা, সেটাই এখন প্রশ্ন।