নির্ভয়া কাণ্ডের পরও দিল্লিতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে তিন গুণ, বলছে সরকারি রিপোর্ট
- গত চার বছরে দিল্লিতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে তিন গুণ।
- পুলিশে মহিলাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এক তৃতীয়াংশ ক্ষেত্র পূরণ হয়নি। দিল্লি পুলিশে এই মুহূর্তে মহিলা আধিকারিকের সংখ্যা শতকরা হারে ৮.৪ জন।
- পুরুষ আধিকারিকদের পক্ষপাতমূলক আচরণ আগের মতোই একইরকম রয়েছে।
- ২০১৩ সালে পুলিশ ট্রেনিংয়ে যেখানে ৯.৪ শতাংশ টাকা বরাদ্দ হতো, সেখানে ২০১৫ সালে তা কমে ২.৫৭ শতাংশ হয়েছে।
- নির্ভয়া কাণ্ডের পরে এই সংক্রান্ত একটি ফান্ড তৈরি হয়। সেই 'নির্ভয়া ফান্ড' এর মাধ্যমে মোবাইলে এমন একটি অ্যালার্ম থাকবে যা টিপলেই সঙ্কেত পৌঁছে যাবে এবং বিপদ এড়ানো যাবে। সেই সংক্রান্ত নিলাম সেরে তার কন্ট্রাক্ট দেওয়ার কাজও সারা হয়নি।
একলপ্তে এই হল নির্ভয়া কাণ্ডের চার বছর পর দিল্লির অবস্থা। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাসের মধ্যে ফিজিওথেরাপির ছাত্রীকে নির্দয়ভাবে গণধর্ষণ করে নৃশংস অত্যাচার করা হয়েছিল। সেই মেয়েটিকেই সারা দেশ নির্ভয়া নামে চিনেছে। তবে তার মৃত্যুর পরও দিল্লি আছে দিল্লিতেই। [যৌন দাসত্বের কারবারে ভারতের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ]
ভার্মা কমিশনের সুপারিশ ছিল, পুলিশে বেশি করে মহিলাদের অন্তর্ভূক্তি। অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জায়গা মহিলা পুলিশের থাকবে। কনস্টেবল থেকে শুরু করে সাব ইনস্পেক্টর পর্যন্ত পগদে মহিলাদের নিয়োগের উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। সেইমতো ২০১১ সালের ৩৫৭২ টি পদের চেয়ে ২০১৫ সালে এসে তা বেড়ে হয়েছে মাত্র ৪৫৮২টি। [আধুনিক ভারতে এখনও ক্রীতদাস প্রথায় বাধ্য ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ]
'ব্যুরো অব পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট'-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে লিঙ্গ সংবেদনশীলতা সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণ পুলিশের মধ্যে করার ব্যবস্থা হয়েছিল। যাতে মহিলাদের প্রতি বৈষম্য, অত্যাচার, পরিবারের মধ্যে ছোট হওয়া, মামলা, আইনি বিধান ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে এর সমাধান সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় পুলিশ আধিকারিকের কাছে স্পষ্ট হয়।
সব ধরনের পুলিশ ফোর্সেই এই ধরনের প্রশিক্ষণ আবশ্যিক করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই প্রশিক্ষণেও এখন ঢিলেমি চলছে বলে জানা গিয়েছে। মূলত সরকারি ঔদাসীন্য ও সচেতনতার অভাবেই যে এমন হচ্ছে সে বিষয়ে একমত জাতীয় মহিলা কমিশন ও পুলিশের অন্দরেই বড়বাবুরা।
আর ধর্ষণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০১২ সালের পর থেকে এমন ঘটনা ২০০ শতাংশ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে ফরেনসিক বিষয়গুলি প্রমাণ করার সীমাবদ্ধতা অন্যতম বড় কারণ হিসাবে উঠে এসেছে। এছাড়া ধর্ষিতাকে নানা সময়ে পরে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। সেই অবস্থাতেই তাদের বসিয়ে রাখা হয়। এমনকী ময়লা জামাকাপড় ধুয়ে স্নান করতেও দেরি করা হয়। এমনকী মানসিক অবসাদ কাটানোর জন্য কোনও কাউন্সেলিংও করা হয় না।
শুধু ধর্ষণ নয়, তথ্য বলছে, মহিলাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য অপরাধও গত কয়েকবছরে অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়েছে। মহিলাদের সাহায্যার্থে চারটি হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে। কিন্তু তাতেও আগের চেয়ে অভিযোগ জানানোর সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। ২০১৪ সালে তা ছিল ৭৪,৯৪৪টি। ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৮,৯৫৬টিতে। ফলে সবমিলিয়ে দিল্লি রয়েছে দিল্লিতেই।