ঢাকা সন্ত্রাসের ৪ দিন পরে ঈদের জন্য ২ দিনের ছুটি ঘোষণা মমতার, কাকে বোকা বানাচ্ছেন?
কলকাতা, ৬ জুলাই : হাতে গোনা কয়েকদিন আগে ঢাকার রেস্তোরাঁয় জঙ্গিহানায় ২০ বিদেশী নাগরিকের মৃত্যুতে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ, গোটা বাংলা। গতকাল ঈদ উপলক্ষে রাজ্যে দু'দিনের ছুটি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ আজ ৬ তারিখ ও আগামীকাল ৭ তারিখ ঈদ উপলক্ষে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ছুটি।
এই দুটি ঘটনার মধ্যে একটি মর্মান্তিক, দুঃখজনক। অন্যটি খুশির খবর। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে দুটি ঘটনার মধ্যে কোনও যোগসূত্রই নেই কিন্তু আদতে যোগটা রয়েছে গভীরে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার জন্য তা প্রাসঙ্গিকও বটে।
ঢাকার সন্ত্রাস মমতার জন্য নয়া চ্যালেঞ্জের জন্ম দেবে
ঢাকার সন্ত্রাসের ঘটনা মমতাকে জ নতুন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। এবং যেখানে মুসলিমদের তুষ্ট করে চলেন বলে নাম আছে মমতার সেখানে কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা তিনি করবেন তা সত্যিই দেখার বিষয়।
ঢাকা সন্ত্রাসের পর ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল কিছুদিন স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্যসভাপতি ও বিধায়ক দীলিপ ঘোষ। বিধানসভায় তার তীব্র বিরোধিতা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট বলে দেন সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা মৈত্রীর কোনও সম্পর্ক নেই। গেরুয়া দলকে ধৈর্য্য বজায় রাখতে এবং রাজ্যে অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ তৈরি না করার উপদেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি এও বলেন, ১ জুলাই ঢাকা সন্ত্রাসের ঘটনা শোনার পর তিনি ঘুমতে পারেননি। তিনি পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি চালানোর।
ঢাকার ঘটনা নতুন মেরুকরণ তৈরি করবে যা বিজেপির ভাবমূর্তির সঙ্গে খাপ খায়
ঢাকার সন্ত্রাসের ঘটনায় যে নিরাপত্তা দিকটি নিয়েই চিন্তিত নন তৃণমূল সুপ্রিমো। ঢাকার সন্ত্রাস বাংলার রাজনীতিতেও যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে সে বাস্তবটাই ভাবাচ্ছে তাকে। মমতা জানান ঢাকা সন্ত্রাসের ঘটনার পুরো ফায়দা তোলার চেষ্টা করবে রাজ্য বিজেপি। রাজ্যে এমনিতেই বিজেপির অবস্থা তলানিতে। তাই এই ইস্যু নিয়েই রাজ্যে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা যেবিজেপি করবে তা অজানা নয় মমতার মতো বিচক্ষণ রাজনীতিবিদের।
এই ইস্যু নিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করার প্রচেষ্টা বিজেপি করবেই কারণ এরাজ্যে হারানোর মতো তাদের কাছে কিছু নেই। কিন্তু মমতার ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়, কারণ নির্বাচনের বাজারে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক মমতার একটা বড় শক্তি। বিজেপি যতই আক্রমণ শানাক কোনও ভাবেই এই ভোটব্যাঙ্ককে হাতছাড়া করতে চাইবেন না মমতা।
সন্ত্রাসহানার পরেও যদি মমতা তুষ্ট করার রাজনীতি করেন তাহলে কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে মমতাকে
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তুষ্ট করার রাজনীতি যদি বজায় রাখেন মমতা তাহলে কিন্তু তাঁকে ও তাঁর দলকে আরও সমস্যার মুখে পড়তে হবে পদ্মদলের কারনে। যেমন ধরুণ, ঈদ উপলক্ষে ২ দিনের ছুটি ঘোষণা রাজ্যের।
ঈদ উপলক্ষে রাজ্যে বাড়তি ছুটি দিয়ে মমতা হয়তো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে এটাই জাহির করতে চাইছেন যে তিনি সবসময় তাদের পাশে আছেন। কিন্তু কয়েকদিন আগের ঢাকা সন্ত্রাস কিন্তু এক্ষেত্রে মমতার বিপক্ষে যেতে পারে এবং পাশাপাশি তা বিজেপিকে এক ধাক্কায় অনেকটা সাহায্য করতে পারে।
ঈদের জন্য দুদিনের ছুটি ঘোষণা কেন?
মমতা সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের উপর জোর দেন। সেটা স্বাভাবিকও। কিন্তু রাজনীতিবিদদের একটা সমস্যা হল রাজনৈতিক ফায়দা তোলার বিষয়ে তারা লোভসম্বরণ করতে পারেন না। আদৌ কি ঈদ উপলক্ষে রাজ্যে ২ দিনের ছুটি কোনও প্রয়োজন ছিল?
বাংলাদেশ সরকার কঠোরভাবে দমন করার পরও যদি এরাজ্যে অশুভ শক্তির প্রবেশ আটকাতে ব্যর্থ হয় রাজ্য সরকার, তাহলে বিরোধী দলগুলি মমতার বিরুদ্ধে অস্ত্র পাবে হাতে। তারা আঙুল তুলবে সংখ্যালঘু আবেগকে তোল্লাই দিতে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠদের জীবনকে সঙ্কটের মুখে ফেলছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিরোধীদের এই সুযোগটা দেওয়ার কি কোনও প্রয়োজন রয়েছে?