(১৯৫২-২০১৭) ভারতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইতিহাস জেনে নিন একনজরে
পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এবছর ভারতের চতুর্দশতম রাষ্ট্রপতিকে বেছে নেওয়ার পালা। তবে তার আগে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক প্রথম থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইতিহাস বেশ বৈচিত্রপূর্ণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভঙ্গুর রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে বের করে আনতে একটি শক্তিশালী সংবিধানের প্রয়োজন ছিল। ১৯৫০ সালে তা প্রণয়ন করা হয়। এরপর মাত্র দু'বছরের মধ্যেই প্রথমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় ভারতবর্ষে। তারপর দীর্ঘ ৬৫ বছরে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে ভারতীয় রাজনীতি।
কখনও ভারত-পাক যুদ্ধ হয়েছে, কখনও আবার দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। তবে ভারতের সংবিধান অনুযায়ী প্রধান হিসাবে রাষ্ট্রপতি পদের গুরুত্ব কখনও হারিয়ে যায়নি। এবছরও পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভারতের চতুর্দশতম রাষ্ট্রপতিকে বেছে নেওয়ার পালা। তবে তার আগে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক প্রথম থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে।
১৯৫২ সাল
ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালের ২ মে। নির্বাচনে জিতে স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন রাজেন্দ্র প্রসাদ। সেবছর মোট ইলেক্টোরাল ভ্যালু ছিল ৬০৫,৩৮৬টি। তার মধ্যে ৫০৭, ৪০০টি ভোট পেয়ে জয়ী হন রাজেন্দ্র প্রসাদ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কেটি শাহ। তিনি পান ৯২, ৮২৭টি ভোট।
১৯৫৭ সাল
১৯৫৭ সালের ৬ মে দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়। ফের একবার রাজেন্দ্র প্রসাদই ভোটে জিতে রাষ্ট্রপতি হন। মোট ৪৬৪, ৩৭০টি ভোটের মধ্যে রাজেন্দ্র প্রসাদ একাই ৪৫৯, ৬৯৮টি ভোট বা ভোট ভ্যালু আয়ত্ত করে নেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চৌধুরী হরি রাম ও নগেন্দ্র নারায়ণ দাস। হরি রাম মাত্র ২৬৭২টি ও নারায়ণ দাস মাত্র ২ হাজার ভোট পান।
১৯৬২ সাল
ভারতের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬২ সালের ৭ মে। সেবছর মোট ভোট ভ্যালু থিল ৫৬২, ৯৪৫। তার মধ্যে ৫৫৩, ০৬৭টি পেয়ে জয়ী হন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। এবারও দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেন চৌধুরী হরি রাম। এবার তিনি পান ৬৩৪১টি ভোট।
১৯৬৭ সাল
চতুর্থ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় ৬ মে ১৯৬৭ সালে। এবং এইবছর প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দারুণ লড়াই হয়। জাকির হুসেন ৪৭১, ২৪৪টি ভোট ভ্যালু পেয়ে জয়ী হন। ৩৬৩, ৯৭১টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেন কোকা সুব্বারাও। দুজনেই অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষ ছিলেন। সেবছর মোট ইলেক্টোরাল ভোট ভ্যালু ছিল ৮৩৮, ১৭০।
১৯৬৯ সাল
মাত্র ২ বছরের মধ্যেই ফের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়। মোট ইলেক্টোরাল ভ্যালু ছিল ৮২৫, ৫০৪টি। তার মধ্যে ৪২০, ০৭৭টি পান বরাহগিরি বেঙ্কট গিরি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নীলম সঞ্জীব রেড্ডি। তিনি পান ৪০৫, ৪২৭টি ভোট।
১৯৭৪ সাল
ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালের ১৭ অগাস্ট। অসম থেকে লড়াই করা ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ পশ্চিমবঙ্গ থেকে লড়াই করা ত্রিদিব চৌধুরীকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে দেন। মোট ইলেক্টোরাল ভ্যালু ছিল ৯৪৩, ৩০৯টি। তার মধ্যে ফকরুদ্দিন পান ৭৫৪, ১১৩টি ভোট। বাংলা থেকে আরএসপির হয়ে দাঁড়ানো ত্রিদিব চৌধুরী ১৮৯, ১৯৬টি ভোট পান।
১৯৭৭ সাল
মাত্র তিনবছরের মধ্যে ফের একবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সপ্তম এই নির্বাচনে ১৯৭৭ সালের ৬ অগাস্ট ভোটে জিতে পদে আসীন হন জনতা পার্টির নীলম সঞ্জীব রেড্ডি। সর্বদল সম্মতিতে ভোট হওয়ায় এবছর ভোটাভুটি হয়নি। তিনি সর্বসম্মতিতে রাষ্ট্রপতি পদে বসেন।
১৯৮২ সাল
এবছর প্রথম পাঞ্জাব থেকে কংগ্রেসের দাঁড়া করানো প্রার্থী জৈল সিং জিতে রাষ্ট্রপতি হন। সেবছর মোট ভোট ভ্যালু ছিল ১,০৩৬,৭৯৮। জৈল সিং তার মধ্যে ৭৫৪, ১১৩টি ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এইচ আর খান্না। তিনি পান ২৮২, ৬৮৫টি ভোট। প্রথম শিখ হিসাবে দেশের সর্বোচ্চ আসনে বসেন তিনি। এরপরে আর একমাত্র শিখ হিসাবে মনমোহন সিং দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
১৯৮৭ সাল
নবম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়াই হয় তামিলনাড়ু বনাম কেরলের। তামিলনাড়ুর আর বেঙ্কটরমন মোট ১,০২৩,৯২১ ভোটের মধ্যে ৭,৪০,১৪৮টি ভোট ভ্যালু পেয়ে জয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ভিআর কৃষ্ণ আইয়ার। তিনি পান ২৮১, ৫৫০টি ভোট ভ্যালু।
১৯৯২ সাল
উদার অর্থনীতি শুরু করার পরের বছরের এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন মধ্যপ্রদেশের শঙ্কর দয়াল শর্মা। সেবছর মোট ইলেক্টোরাল ভোট ভ্যালু ছিল ১,০২৬,১৮৮টি। তার মধ্যে ৬৭৫,৮৬৪ পান শঙ্কর দয়াল শর্মা। তিনি হারান মেঘালয়ের নির্দল প্রার্থী জিজি সোয়েলকে। সোয়েল পান ৩৪৬, ৪৮৫টি ভোট ভ্যালু।
১৯৯৭ সাল
এইবছর ভারতের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হয়। এবছরের ১৭ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কংগ্রেস কেরল থেকে দাঁড় করায় কেআর নারায়ণনকে। মোট ৯৫৬, ২৯০ ভোট পেয়ে জয়ী হন নারায়ণন। তিনি হারান টিএন সেশনকে। সেশনও কেরলের নর্দল প্রার্থী ছিলেন, পান মাত্র ৫০, ৬৩১ ভোট ভ্যালু।
২০০২ সাল
ভারতের স্বনামধন্য বিজ্ঞানী তথা 'মিসাইল ম্যান' এপিজে আবদুল কালাম নির্দল প্রার্থী হন। তাঁকে সমর্থন করে তৎকালীন অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে এনডিএ সরকার। কালামের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন বামেদের পক্ষে দাঁড়ানো প্রার্থী ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সায়গল। কালাম পান মোট ৯২২, ৮৮৪ ভোট। ও লক্ষ্মী সায়গল পান ১০৭, ৩৬৬টি ভোট।
২০০৭ সাল
প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে কংগ্রেসের তরফে দাঁড়িয়ে দেশের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি হন প্রতিভা পাটিল। তিনি পরাজিত করেন বিজেপি প্রার্থী ভৈঁরো সিং শেখাওয়াতকে। ২০০৭ সালের ১৯ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়। সেবার প্রতিভা পাটিল পান ৬৩৮, ১১৬টি ভোট। শেখাওয়াত পান ৩৩১, ৩০৬টি ভোট। সেইসময়ে প্রতিভা পাটিল রাজস্থানের গভর্নর ছিলেন।
২০১২ সাল
বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখার মতো বছর। সেবছরও ১৯ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়। প্রথম বাঙালি হিসাবে রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেইসময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন তিনি। সেখান থেকে কংগ্রেসের টিকিটে প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিলেন এনডিএ-র পিএ সাংমা। প্রণববাবু পান ৭১৩, ৭৬৩ ভোট ভ্যালু। এদিকে সাংমা পান৩১৫, ৯৮৭ ভোট ভ্যালু।
২০১৭ সাল
এবছর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৭ জুলাই এবং গণনা হবে ২০ জুলাই। এবছর এনডিএ প্রার্থী করেছে দলিত নেতা রামনাথ কোবিন্দকে। অন্যদিকে ইউপি সহ বিরোধী দলগুলি কংগ্রেস নেত্রী তথা লোকসভার প্রথম মহিলা স্পিকার মীরা কুমারকে রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড় করিয়েছে। যা পরিস্থিতি তাতে হিসাবের বিচারে রামনাথ কোবিন্দের নির্বাচন জেতা শুধু সময়ের অপেক্ষা।