বিবেকানন্দ জয়ন্তী : স্বামীজির ১০ টি অমর বাণী যা যুব সমাজকে অণুপ্রেরণা দেয়
আধুনিক ভারতের পথপ্রদর্শক স্বামী বিবেকানন্দের আজ ১৫৪ তম জন্মবার্ষিকি। স্বামীজির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে তাঁরই কিছু অমর বাণী তুলে ধরা হল পাঠকদের জন্য।
কলকাতা, ১২ জানুয়ারি : আধুনিক ভারতের পথপ্রদর্শক স্বামী বিবেকানন্দের আজ ১৫৪ তম জন্মবার্ষিকি। দেশের সর্বত্র উৎসাহ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হচ্ছে স্বামীজির জন্মজয়ন্তী।
স্বামীজির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে তাঁরই কিছু অমর বাণী তুলে ধরা হল পাঠকদের জন্য।
১) 'অমৃতের পুত্র' - কী মধুর ও আশার নাম! হে ভ্রাতৃগণ, এই মধুর নামে আমি তোমাদের সম্বোধন করতে চাই। তোমরা অমৃতের অধিকারী। ...তোমরা ঈশ্বরের সন্তান, অমৃতের অধিকারী-পবিত্র ও পূর্ণ।...
২) 'পরোপকারই জীবন, পরহিতচেষ্ঠার অভাবই মৃত্যু। শতকরা নব্বই জন নরপশুই মৃত, প্রেততুল্য; কারণ হে যুবকবৃন্দ, যাহার হৃদয়ে প্রেম নাই, সে মৃত ছাড়া আর কি? হে যুবকবৃন্দ, দরিদ্র অজ্ঞ ও নিপীড়িত জনগণের ব্যথা তোমরা প্রাণে প্রাণে অনুভব কর, সেই অনুভবের বেদনায় তোমাদের হৃদয়ে রুদ্ধ হউক, মষ্তিষ্ক ঘুরিতে থাকুক, তোমাদের পাগল হইয়া যাইবার উপক্রম হউক। তখন গিয়া ভগবানের পাদপদ্মে তোমাদের অন্তরের বেদনা জানাও। তবেই তাহার নিকট হইতে শক্তিও সাহায্য আসিবে-অদম্য উৎসাহ, অনন্ত শক্তি আসিবে। গত দশ বৎসর ধরিয়া আমার মুলমন্ত্র ছিল এগিয়ে যাও। এখনও বলিতেছি এগিয়ে যাও। যখন চতুর্দিকে অন্ধকার বই আর কিছুই দেখিতে পাই নাই, তখনও বলিয়াছি-এগিয়ে যাও। এখন একটু একটু আলো দেখা যাইতেছে, এখনও বলিতেছি-এগিয়ে যাও। বৎস, ভয় পাইও না। উপরে তারকাখচিত অনন্ত আকাশমন্ডলের দিকে সভয় দৃষ্টিতে চাহিয়া মনে করিও না, উহা তোমাকে পিষিয়া ফেলিবে। অপেক্ষা কর, দেখিবে-অল্পক্ষণের মধ্যে দেখিবে, সবই তোমার পদতলে। টাকায় কিছুই হয় না, নামেও হয় ন, যশেও হয় না, বিদ্যায়ও কিছু হয় না, ভালবাসায় সব হয়-চরিএই বাধাবিঘ্নরূপ বজ্রদৃঢ় প্রাচীরের মধ্য দিয়া পথ করিয়া লইতে পারে।...'
৩)'মানুষকে সর্বদা তাহার দুর্বলতার বিষয় ভাবিতে বলা তাহার দুর্বলতার প্রতীকার নয়- তাহার শক্তির কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়াই প্রতিকারের উপায়। তাহার মধ্যে যে শক্তি পূর্ব হইতে বিরাজিত ,তাহার বিষয় স্মরণ করাইয়া দাও।'
৪) 'কেবল শারীরিক সাহায্য দ্বারা জগতের দুঃখ দূর করা যায় না। যতদিন না মানুষের প্রকৃতি পরিবর্তিত হইতেছে, ততদিন এই শারীরিক অভাবগুলি সর্বদাই আসিবে এবং দুঃখ অনুভূত হইবেই হইবে। যতই শারীরিক সাহায্য কর না কেন, কোনমতেই দুঃখ একেবারে দূর হইবে না। জগতের এই দুঃখ-সমস্যার একমাত্র সমাধান মানবজাতিকে শুদ্ধ ও পবিত্র করা। আমরা জগতে যাহা কিছু দুঃখকষ্ট ও অশুভ দেখিতে পাই, সবই অজ্ঞান বা অবিদ্যা হইতে প্রসূত। মানুষকে জ্ঞানালোক দাও, সকল মানুষ পবিত্র আধ্যাত্মিক-বলসম্পন্ন ও শিক্ষিত হউক, কেবল তখনই জগৎ হইতে দুঃখ নিবৃত্ত হইবে, তাহার পূর্বে নয়। দেশে প্রত্যেকটি গৃহকে আমরা দাতব্য আশ্রমে পরিণত করিতে পারি, হাসপাতালে দেশ ছাইয়া ফেলিতে পারি, কিন্তু যতদিন না মানুষের স্বভাব বদলাইতেছে, ততদিন দুঃখ-কষ্ট থাকিবেই থাকিবে।'
৫) "চরিত্র গঠনের জন্য ধীর ও অবিচলিত যত্ন, এবং সত্যোপব্ধির জন্য তীব্র প্রচেষ্টাই কেবল মানব জাতির ভবিষৎ জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করিতে পারে।"
৬) ওরে, কেউ কাকেও শেখাতে পারে না। 'শেখাচ্ছি' মনে করেই শিক্ষক সব মাটি করে । কি জানিস, বেদান্ত বলে-এই মানুষের ভেতরেই সব আছে । একটা ছেলের ভেতরেও সব আছে । কেবল সেইগুলি জাগিয়ে দিতে হবে, এইমাত্র শিক্ষকের কাজ । ছেলেগুলো যাতে নিজ নিজ হাত-পা নাক-কান মুখ-চোখ ব্যবহার করে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে নিতে শেখে, এইটুকু করে দিতে হবে । তাহলেই আখেরে সবই সহজ হয়ে পড়বে । কিন্তু গোড়ার কথা-ধর্ম । ধর্মটা যেন ভাত আর সবগুলো তরকারি । কেবল শুধু তরকারি খেয়ে হয় বদহজম, শুধু ভাতেও তাই ।
৭) "মানুষ মূর্খের মত মনে করে, স্বার্থপর উপায়ে সে নিজেকে সুখী করিতে পারে। বহুকাল চেষ্টার পর অবশেষে বুঝিতে পারে-প্রকৃত সুখ স্বার্থরতার নাশে এবং সে নিজে ব্যতীত অপর কেহই তাহাকে সুখী করিতে পারে না।"
৮) "তোমাদের সকলের উপর ভগবানের আর্শীবাদ বর্ষিত হ্উক! তাঁহার শক্তি তোমাদের সকলের ভিতর আসুক-আমি বিশ্বাস করি, তাঁহার শক্তি তোমাদের মধ্যেই রহিয়াছে। বেদ বলিতেছেন, 'ওঠ, জাগো, যতদিন না লক্ষ্যস্থলে পঁহুছিতেছ, থামিও না।' জাগো, জাগো, দীর্ঘ রজনী প্রভাতপ্রায়। দিনের আলো দেখা যাইতেছে। মহাতরঙ্গ উঠিয়াছে। কিছুতেই উহার বেগ রোধ করিতে পারিবে না।... উৎসাহ, বৎস, উৎসাহ-প্রেম, বৎস, প্রেম। বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, আর ভয় করিও না, সর্বপেক্ষা গুরুতর পাপ-ভয়!...বিশ্বাস কর, বিশ্বাস কর, প্রভুর আজ্ঞা-ভারতের উন্নতি হইবেই হইবে, জনসাধারণকে এবং দরিদ্রদিগকে সুখী করিতে হইবে; আর আনন্দিত হও যে, তোমরাই তাঁহার কার্য করিবার নির্বাচিত যন্ত্র। ধর্মের বন্যা আসিয়াছে। আমি দেখিতেছি উহা পৃথিবীবে ভাসাইয়া লইয়া যাইতেছে-অদম্য, অনন্ত, সর্বগ্রাসী। সকলেই সম্মুখে যাও, সকলের শুভেচ্ছা উহার সহিত যোগ দাও। সকল হস্ত উহার পথের বাধা সরাইয়া দিক। জয়! প্রভুর জয়!!"
৯) "দর্শনবর্জিত ধর্ম কুসংস্কারে গিয়ে দাঁড়ায়, আবার ধর্মবর্জিত দর্শন শুধু নাস্তিকতায় পরিণত হয়। আমাদের নিম্নশ্রেণীর জন্য কর্তব্য এই, কেবল তাহাদিগকে শিক্ষা দেওয়া এবং তাহাদের বিনষ্টপ্রায় ব্যক্তিত্ববোধ জাগাইয়া তোলা।"
১০)
"জোর
ক'রে
সংস্কারের
চেষ্টার
ফল
এই
যে,
তাতে
সংস্কার
বা
উন্নতির
গতিরোধ
হয়।
কাউকে
ব'লো
না-'তুমি
মন্দ',
বরং
তাকে
বলো-'তুমি'
ভালই
আছ,
আরও
ভাল
হও।'
পুরুষরা
সব
দেশেই
অনিষ্ট
করে
থাকে;
কারণ
তারা
লোককে
গাল
দেয়
ও
তাদের
সমালোচনা
করে।
তারা
একটা
দড়ি
ধরে
টান
দেয়,
মনে
করে
সেটাকে
ঠিক
করবে,
কিন্তু
তার
ফলে
আর
দু-তিনটা
দড়ি
স্থানভ্রষ্ট
হয়ে
পড়ে।
প্রেমে
কখন
কেউ
গাল-মন্দ
করে
না,
শুধু
প্রতিষ্ঠার
আকাঙ্ক্ষাতেই
মানুষ
ঐ
রকম
ক'রে
থাকে।
'ন্যায়সঙ্গত
রাগ'
ব'লে
কোন
জিনিস
নেই।
যদি
তুমি
কাউকে
সিংহ
হ'তে
না
দাও,
তা
হ'লে
সে
ধূর্ত
শৃগাল
হয়ে
দাঁড়াবে।
স্ত্রীজাতি
শক্তিস্বরূপিণী,
কিন্তু
এখন
ঐ
শক্তি
কেবল
মন্দ
বিষয়ে
প্রযুক্ত
হচ্ছে।
তার
কারণ,
পুরুষ
তার
উপর
অত্যাচার
করছে।
এখন
সে
শৃগালীর
মতো;
কিন্তু
যখন
তার
উপর
আর
অত্যাচার
হবে
না,
তখন
সে
সিংহী
হয়ে
দাঁড়াবে।
সাধারণতঃ
ধর্মভাবকে
বিচার-বুদ্ধি
দ্বারা
নিয়মিত
করা
উচিত।
তা
না
হ'লে
ঐ
ভাবের
অবনতি
হয়ে
ওটা
ভাবুকতামাত্রে
পরিণত
হ'তে
পারে।"
ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে সংগৃহীত