ডবল ফেলুদা সিনেমা রিভিউ : এ ফেলুদা তো 'সিনিয়র সিটিজেন', তবু হজম করতে কষ্ট হল না
প্রথমে সব্যসাচী চক্রবর্তীকে ফেলুদার চরিত্রে দেখে মনে হল, আরে এ তো সিনিয়ার সিটিজেন ফেলুদা। পরে অবশ্য বিষয়টা হজম করতে কষ্ট হল না।
শীতের আমেজ, হাতে ফেলুদা সিরিজের বই নিয়ে রোদ পোয়ানো। আহা সে সময় আর কই? তবু বহুদিন বাদে ফের পর্দায় ফেলুদা-কে দেখতে পাওয়ার উন্মাদনটা আর চেপে রাখা গেল না।
প্রথমে সব্যসাচী চক্রবর্তীকে ফেলুদার চরিত্রে দেখে মনে হল, আরে এ তো সিনিয়ার সিটিজেন ফেলুদা। সন্দীপ রায়ের ফেলুদা, সত্যজিতের ফেলুদা সত্যিই হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু যত ছবি এগোতে লাগল তত মনে হল পঞ্চাশ বছর তো কেটে গিয়েছে এবার মাঝবয়সী প্রদোষ মিত্তিরের চুলে হাল্কা পাক ধরলে ক্ষতি কি। ফেলুদার ক্যারিশ্মা তো বজায় আছে। সত্যিজিতের ফেলুদার বয়স হলে ঠিক এমনটাই হবে।
সত্যি কথা বলতে সব্যসাচীর বয়স ফেলুদার সঙ্গে মানানসই না হলেও উপায় কি? বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আর কে আছে যে প্রদোষ মিত্রের সেই ক্যারিশ্মা চোখেমুখের বুদ্ধিমত্তার স্বপ্রতিভ ছাপ ফুটিয়ে তুলতে পারবে? যাক এ আলোচনার অন্ত নেই। আসা যাক ছবিতে।
এই প্রথমবার ফেলুদার কোনও ছবিতে দুটি আলাদা গল্পকে একসঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে সমাদ্দারের চাবি আর গোলকধাম রহস্য।
প্রচুর টাকা পয়সা রেখে মারা যান সঙ্গীতশিল্পী রাধারমণ সমাদ্দার। সেই কেস হাতে নিয়েই আসেন ফেলুদা। মৃত্য়ুর আগে রাধারমণ একটাই কথা আওড়েছিলেন। "আমার নামে চাবি.." কিন্তু কিসের সে চাবি, কোথায় রয়েছে, কোথা থেকে এল, এক চাবি ঘিরে তৈরি হয় নানাবিধ প্রশ্ন। আর এই নিয়েই হল সমাদ্দারের চাবি।[ব্যোমকেশ পর্ব মুভি রিভিউ : 'সত্যাণ্বেষী' আবির আরও স্মার্ট আরও ঝকঝকে, প্রেমে না পড়ে থাকা যায় না]
প্রথমার্ধে সমাদ্দারের চাবির গল্পের পর দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় গোলকধাম রহস্য। সুবীর দত্ত নামে এক ব্যক্তি ফেলুদার হাতে চুরির কিনারার কেস তুলে দেয়। অন্ধ দাদা নীহার ঘরে চোর ঢুকেছিল। ঘরে গবেষণার কাগজপত্র থাকে। বৈজ্ঞানিক মহলে তা অমূল্য। ফেলুদার ডাক পড়ে। তারই মাঝে আবার গোলকধামে খুন হয় ভাড়াতে দস্তুরকে চুরি থেকে এবার কেস পাল্টে যায় খুনের তদন্তে।
'বৃদ্ধ' ফেলুদা ওরফে সব্যসাচী চক্রবর্তী একেবারে জমিয়ে অভিনয়টা করেছেন। বয়স হলেও কোনও জায়গায় নিজের দিক থেকে কোনও খামতি রাখেননি সব্যসাচী। ডায়লগ ডেলিভারি, তাকানো একেবারের নিখুঁত। তবে লং শটে ফেলুদাকে যতবার ধরা হয়েছে ততবার এক্সপোজ হয়েছেন পরিচালক সন্দীপ রায়। হাঁটা চলায় কোথাও একটা বার্ধক্যের ছাপ ধরা পড়েছে ফেলুদার শরীরা। আর তাই হয়তো ফেলুদার জন্য বেশি লং শট রাখেননি পরিচালক। তবে মোটের উপর সব্যসাচীর বয়স ফেলুদা ম্যাজিকে বাধা হয়নি।
সাহেব ভট্টাচার্যকে আগেও তপসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই ছবিতে সাহেবের জন্য আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তবে আলাদা করে উল্লেখ করতেই হয় সমাদ্দারের চাবি গল্পের মনিমোহন সমাদ্দারের। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্রাত্য বসু। যতবার ফ্রেমে ধরা পড়েছেন অন্য কারোর দিকে দর্শকের চোখ ঘোরাতে দেননি।
সব্যসাচীর একসময়ের তপসে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এই ছবিতে রয়েছেন তবে অন্য ভূমিকায়। এছাড়াও এই ছবিতে বেশ কটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় তকেছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, গৌরব চক্রবর্তী, রাজেশ শর্মা প্রমুখ। প্রত্যেকে নিজের নিজের জায়গায় মানানসয়ী অভিনয় করেছেন।