'মহানায়ক'-র নাম শুনলেই রেগে উঠছেন সুপ্রিয়া দেবী!
মহানায়ক উত্তম কুমার প্রসঙ্গে আজ অবধি মুখে ওকটা কুকথা শোনা যায়নি সুপ্রিয়াদেবীর মুখে। হবেই বা কেন তিনি যে উত্তমকুমারের খুব কাছের মানুষ ছিলেন। নিশ্চই ভাবছেন হঠাৎ কি হল যার জন্য একেবারে মহানায়কের নাম শুনলেই রেগে যাচ্ছেন সুপ্রিয়া দেবী। [(ছবি) টলিউডের অভিনেত্রীদের সাদা-কালো প্রেম!]
আসলে, যে মহানয়ক-কে সহ্য করতে পারছেন না সুপ্রিয়া দেবী তা উত্তমকুমার নয়, বরং উত্তমকুমারের জীবনী নিয়ে টেলিভিশনের ধারাবাহিক মহানায়ক। ['উত্তম-সুচিত্রার মধ্যে কখনওই প্রেমের সম্পর্ক ছিল না']
আনন্দবাজার পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে এই ধারাবাহিক নিয়ে নিজের সমস্ত রাগ উগড়ে দিয়েছেন উত্তমকুমারের বেণু। [প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সেরা ৫ অনস্ক্রিন ছদ্মবেশ]
আজগুবি মিথ্যা কথা
সুপ্রিয়া দেবীর স্পষ্ট কথা, বাস্তব থেকে অনেক দূরে টেলিভিশনের এই মহানায়ক। উত্তমকুমারের জীবনের কষ্ট, পরিশ্রম, সংগ্রামের একরত্তিও দেখানোর চেষ্টাও নেই, শুধু টিআরপির লোভে "আজগুবি মিথ্যা কথা" পরিবেশন করা হচ্ছে। কুৎসা আর কেচ্ছা ছাড়া কিছুই দেখানো হচ্ছে না।
মহানায়কের তিন নায়িকা
পাশাপাশি
এই
ধারাবাহিকে
উত্তমকুমারের
তৎকালীন
তিন
প্রধান
নায়িকার
(সুচিত্রা
সেন,
সুপ্রিয়াদেবী
এবং
সাবিত্রী
চট্টোপাধ্যায়)
বিষয়ে
আপত্তিকর
কিছু
মন্তব্য
করা
হয়েছে।
যেমন
শুরুতেই
যেখানে
বলা
হয়েছে
"তাঁর
চারপাশে
ভিড়
করতে
লাগলেন
ইচ্ছা-পূরণের
নায়িকারা।"
এখানে
ঘোরতর
আপত্তি
বেণুদির।
"আমাদের
ইচ্ছাপূরণের
জন্য
আমরা
উত্তমকুমারের
পিছনে
ভিড়
জমিয়েছিলাম?
ছিঃ"
ব্যক্তিত্বে আঘাত
মহানায়ক সিরিয়ালে সুপ্রিয়া দেবীর চরিত্রে অভিনয় করছেন তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়। নাম হয়েছে প্রিয়া চৌধুরি। বেণুদির কথায়, নাম পাল্টালেও কি কারও বুঝতে কোথাও অসুবিধা নেই যে সুচরিতা সুচিত্রা, গায়ত্রী আসলে সাবিত্রী আর প্রিয়া আমি।
সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় এমনকী কাননদেবীর চরিত্র এই ধারাবাহিকে যেভাবে দেখানো হয়েছে তাতে তাদের ব্যক্তিত্বকেই আঘাত করা হয়েছে বলে মনে করেন সুপ্রিয়া দেবী।
আমাকে তো প্রথম থেকেই রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে
আর তাঁর চরিত্রটিকে কীভাবে দেখানো হয়েছে সে বিষয়ে বলতে গিয়ে বেণুদি বলেন, "আর আমাকে তো প্রথম থেকেই রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুবই অপমানজনক। আমার চরিত্রের সঙ্গে ভাষ্যকার দর্শকের পরিচয় করে দিতে হিয়ে বলছেন - ওই যে মেয়েটি একা হেঁটে আসছে, যাকে কেউ দেখছে না, ক্যামেরা এগিয়ে আসছে না...উঠতি নায়িকা প্রিয়া চৌধুরি ইত্যাদি ইত্যাদি। বলা হচ্ছে অরুণ কুমারের নায়িকা হওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি। অরুণ কুমারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য প্রিয়া অবাঙালি প্রোডিউসারের সঙ্গে বেহায়াপনা করে ঝুলে পড়ছে। ছিঃ এসব ধ্যাষ্টামি ছাড়া আর কি?"
আমি শুধু অরুণকুমারের নায়িকা হতে চাই
মহানায়ক ধারাবাহিকের একটি দৃশ্যে দেখানো হয়েছে, যেখানে প্রিয়া চৌধুরি বলছেন "আমি শুধু অরুণকুমারের নায়িকা হতে চাই।" এই সংলাপ নিয়ে চরম আপত্তি তুলেছেন বেণুদি। তাঁর কথায়, "আমাকে যে যখন জিজ্ঞাসা করেছে আমি বলেছি, অভিনয় করতে এসেছি। অভিনয়ের সুযোগ থাকলে ক্যারেক্টার রোলও কবর। আমি মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার করেছি। শুধু উত্তমকুমারের নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে থাকলে তা কি পারতাম?"
রুচির অভাব
এমনকী সুপ্রিয়া দেবীর প্রথম স্বাম বিশ্বনাথ চৌধুরির মুখে যে সব কথা বসানো হয়েছে তাও মিথ্য, জঘন্য নোংরা বলেই দাবি বেণুদির। ধারাবাহিকে বিশ্বনাথ চৌধুরি হয়ে গিয়েছেন সোমনাথ চৌধুরি। তাঁর মুখের সংলাপ ‘রাস্তার আলোর নীচে যে মেয়েরা দাঁড়ায় তাদের যা বলা হয়, স্টুডিয়োর আলোর নীচে যে মেয়েরা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায় তাদেরও তাই বলে।' যদিও বেণুদির দাবি, তাঁর অভিনয় নিয়ে কোনও সমস্যা ছিলই না তাঁর স্বামীর। আর 'রাস্তার মেয়ে' এই ধরণের কথা কোনওদিনও তাঁর মুখ দিয়ে বেরয়নি। তিনি রুচিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। ধারাবাহিকের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেই বোধহয় সেটা কম পড়েছে।
অপমান করা হয়েছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কেও
শুধু অভিনেত্রীদের নয়, জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীতকার শ্রদ্ধেয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কেও ছাড়া হয়নি অপমান করতে। তাঁর চরিত্রকেও ছোট করে দেখানো হয়েছে বলেই মনে করছেন প্রবীন এই অভিনেত্রী।
শুধু সুপ্রিয়া দেবী নন, এর আগে এই ধারাবাহির নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ও।