'কসমিক সেক্স' দেখানোয় নিষেধাজ্ঞা নন্দন কর্তৃপক্ষের, কিন্তু কোন যুক্তি আদৌও টেঁকে কি?
এবার সেন্সরশিপের ধাক্ক লাগল বাংলা সিনেমার গায়েও। তবে এই সেন্সরশিপ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের নয়, নন্দন কর্তৃপক্ষের। অন্য প্রেক্ষাগৃহে এই সিনেমা দেখানো গেলেও নন্দনের প্রবেশদ্বার বন্ধ 'কসমিক সেক্স'-এর জন্য। যদিও এর কোনও গ্রহণযোগ্য কারণ এখনও জানা যায়নি। [যে ১০টি বাংলা ছবিতে যৌনতার ছড়াছড়ি]
২০১২ সালে তৈরি এই সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন ঋ, আয়ুষ্মান মিত্র, মুরারী মুখোপাধ্যায়, পাপিয়া ঘোষাল সহ অনেকে। ছবিটির পরিচালনা করেছেন অমিতাভ চক্রবর্তী। প্রযোজনা করেছেন পুতুল মহম্মদ।
নন্দন কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, সিনেমায় ফ্রন্টাল ন্যুডিটি রয়েছে। যা নন্দনে সিনেমা দেখতে আসা দর্শকদের মানসিকতার সঙ্গে খাপ খায় না। আর এখানেই উঠছে হাজারো প্রশ্ন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ফিল্ম উৎসবে যেখানে সিনেমাটি দেখানো হয়েছে, যেখানে সেন্সর বোর্ড বাধা দেয়নি তা কি করে আটকায় নন্দন কর্তৃপক্ষ।
রাজ্যের তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীনে রয়েছে নন্দন প্রেক্ষাগৃহটি। এই দফতরের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, যে সিনেমাকে সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দিয়েছে তা দেখানোয় কি আপত্তি রয়েছে তা জানা নেই। তবে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়া সিনেমা মানুষ দেখতেই পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সিনেমা পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত-ও নন্দন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গোটা সিনেমা জগতের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত বলে তিনি মনে করছেন। সিনেমাটি আটকে দেওয়ায় ছবির পরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তীও সরব। যদিও এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে সরকারি তরফে কোনও কিছু জানানো হয়নি।
বস্তুত, নিয়মিত যারা নন্দনে সিনেমা দেখতে যান সেই দর্শকদের প্রায় সকলেই একমত হবেন, নন্দনে এই সিনেমাটি না দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ ঠিক করছেন না ভুল সেই বিষয়ে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হোক বা অন্য কোনও ফিল্ম উৎসব, নন্দনে বরাবরই 'অন্যরকম' সিনেমা চলেছে।
'প্রাপ্তবয়স্ক' নানা ভাষার বিভিন্ন দেশের সিনেমা এতকাল নন্দনে চলেছে রমরমিয়ে। তা এতদিন তারিয়ে উপভোগ করেছেন তথাকথিত সিনেমা বুদ্ধিজীবী বা আমজনতা। সেই ভাবনার মধ্যে কোনও অশ্লীলতা যদি না থেকে থাকে তাহলে বাংলায় তৈরি একটি সিনেমা দেখাতে আপত্তি কোথায় কর্তৃপক্ষের।
সিনেমায় ফ্রন্টাল ন্যুডিটি-ই যদি একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে এতকাল কি নন্দনে 'ফ্রন্টাল ন্যুডিটি' দেখানো সিনেমা চলেনি? এর জবাব কে দেবে? শরীরতত্ত্ব দেখানো যদি অশ্লীল তাহলে সেই অশ্লীলতা রয়েছে ব্যক্তিবিশেষের মনে। বাংলা সিনেমার প্রাণকেন্দ্র নন্দনে তা দেখালেই এর মর্যাদা কলুষিত হবে, এই ধারণাকে কেন আমদানি করা হচ্ছে?
নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও উদ্দেশ্য, যে দিকে ইঙ্গিত করেছেন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। তবে ঘটনা যাই হোক, পুরো বিষয়টাই এলোমেলো ভাবনার সমন্বয়। যদি আগে এমন সিনেমাকে সেন্সর না করে দেখানো হয় তাহলে আগের নন্দনের দায়িত্বে থাকা গুণী কর্তৃপক্ষরা কি 'অকেজো' ছিলেন। নাকি এখনকার নন্দন কর্তৃপক্ষ বেশি 'কেজো'। ফলে তারা ঠিক-ভুলের বিভেদটা ভালো করে ধরতে পারছেন। বাংলা তথা সারা বিশ্বের সিনেমা যেখানে সাবালক হচ্ছে সেখানে অশ্লীলতার ধুয়ো তুলে অপদার্থতা বন্ধ হোক, এই আওয়াজই উঠছে চারিদিকে।