আবার কি পুরনো মালিকের হাতেই ফিরছে এয়ার ইন্ডিয়া
হাজার হাজার কোটির ক্ষতির বহর নিয়ে চলা এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নীকরণের পথে কেন্দ্র,ইচ্ছুক টাটাগোষ্ঠীর সঙ্গে চলছে কথা
আবার কি পুরনো মালিকের হাতেই ফিরছে এয়ার ইন্ডিয়া। এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক ও বানিজ্যিক মহলে। সূত্রের খবর, বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরণ নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজুর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন।
যদিও, কেন্দ্র সরকারই এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি প্রায় পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতিতে চলা এয়ার ইন্ডিয়াকে পুরোপুরি বিক্রি করা হবে, নাকি আংশিক ভাবে বিক্রি করা হবে।
টাটাগোষ্ঠীর সদর দফতর বোম্বে হাউসের সূত্রের খবর, আংশিক নয়, সরকার এয়ার ইন্ডিয়ার পুরোটা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলেই তারা তা অধিগ্রহণে রাজি হবেন। তবে অন্যতম শর্ত কমাতে হবে ঋণের বোঝা। সূত্রের খবর, টাটা গোষ্ঠী এয়ার ইন্ডিয়ার ৫১ শতাংশ অধিগ্রহণে ইচ্ছুক। যদিও, এবিষয়ে টাটাগোষ্ঠী কিংবা বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের তরফে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এক্ষেত্রে টাটা গোষ্ঠী যদি এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা পায় তবে তা, পুরনো মালিকের কাছেই ফেরত যাবে। দেশে বিমান পরিবহণের পথিকৃত জেআরডি টাটা ১৯৩২ সালে টাটা এয়ারলাইন্সের সূচনা করেছিলেন। চোদ্দো বছর পর তার নাম হয় এয়ার ইন্ডিয়া এবং ১৯৫৩ সালে সংস্থাটির জাতীয়করণ করে কেন্দ্র।
টাটা গোষ্ঠী এয়ার ইন্ডিয়া অধিগ্রহণ করতে পারলে তিনি যে খুব খুশিই হবেন, দীর্ঘ দিন আগে থেকেই তা জানিয়ে এসেছেন, টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এমিরিটাস রতন টাটা।
প্রায় ষোলো বছর আগে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সকে সঙ্গে নিয়ে এয়ারইন্ডিয়া অধিগ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল টাটা গোষ্ঠী। তখন এয়ার ইন্ডিয়ার ৪০ শতাংশ বিক্রি করে দেওয়ার ব্যাপারে কথা হয়েছিল। কিন্তু বাজপেয়ি সরকার সেই বিলগ্নীকরণ প্রক্রিয়ায় সায় দেয়নি।
টাটা গোষ্ঠী এ মুহুর্তে দেশে বিমান পরিবহণে দুটি যৌথ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে। একটি এয়ার এশিয়া এবং অন্য়টি ভিস্তারা। এয়ার এশিয়ার ৪০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে টাটা সন্সের হাতে, বাকি অংশ রয়েছে মালয়েশিয়ার এয়ার এশিয়ার হাতে। অন্যদিকে, ভিস্তারার ৫১ শতাংশ মালিকানা রয়েছে টাটা সন্সের হাতে। বাকি অংশ রয়েছে সিঙ্গাপুর এয়ার লাইন্সের। যদিও যৌথ উদ্যোগদুটির কোনটিরই আর্থিক অবস্থা এই মূহুর্তে ভাল নয়।
টাটা এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স সামনের বছরে ভিস্তারাকে বিমান পরিবহণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইছে। সেক্ষেত্রে তাদের বড় বিমানের দরকার পড়বে। কিন্তু ভিস্তারা এখনও পর্যন্ত কোনও বড় বিমান কিনতে কিংবা ভাড়া নিতে খোঁজখবর করেনি। এক্ষেত্রে যদি এয়ার ইন্ডিয়া টাটাগোষ্ঠীর হাতে আসে তবে বড় বিমানের চাহিদা মিটতে পারে বলেই মনে করছে বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত কর্তাব্যক্তিরা।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বাজার এয়ার ইন্ডিয়ার দখলে। রয়েছে বোয়িং ৭৭৭এস কিংবা ৭৮৭এসের মতো বড় বিমানও। অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকায় এয়ার ইন্ডিয়ার চাহিদা থাকলেও, বিমানের অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামোগত বিষয়, যেমন পরিচ্ছন্ন কেবিন কিংবা বিমানের মধ্যে বিনোদনের মতো ব্য়াপারে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। টাটা গোষ্ঠীর হাতে গেলে তার উন্নতি হবে বলে মনে করছে বানিজ্য মহল।