মুকেশের রিলায়েন্স জিও-র জন্য ভাই অনিলের রিলায়েন্স কমিউনিকেশনের ব্যবসা প্রায় লাটে ওঠে বলে
জিও ধামাকায় ভারতীয় মোবাইল পরিষেবার একাধিক তাবড় তাবড় সংস্থা এখন বিপাকে। একরকমভাবে প্রভাবিত হয়েছে মুকেশ আম্বানীর ভাই অনিল আম্বানীর মোবাইল পরিষেবা দেওয়া সংস্থা রিলায়েন্স কমিউনিকেশন।
মোবাইল পরিষেবার বাজারে রিলায়েন্স গোষ্ঠীর প্রথম পদক্ষেপ ছিল রিলায়েন্স কমিউনিকেশন। মুকেশ আম্বানীর ভাই অনিল আম্বানী এখন এই সংস্থার কর্ণধার। সিডিএমএ মোবাইল পরিষেবায় দেড় দশক আগে দেশজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল রিলায়েন্স কমিউনিকেশন। রিলায়েন্স জিও যেভাবে একের পর এক গ্রাহকবন্ধু অফার দিয়ে চলেছে, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনও একটা সময় ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য এমন পন্থা নিয়েছিল। কিন্তু, সেই রিলায়েন্স কমিউনিকেশন এখন বিশাল ক্ষতির মুখে। সবমিলিয়ে এই ক্ষতির পরিমাণ ৪৫,০০০ কোটি টাকা। রিলায়েন্স কমিউনিকেশনের এই ক্ষতির জন্য রিলায়েন্স জিও দায়ী বলেও দাবি করা হচ্ছে।
এই বিশাল অঙ্কের ক্ষতিকে কী ভাবে সামলানো হবে? এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছিলেন অনিল আম্বানী। তিনি জানিয়েছেন, ক্ষতির অঙ্ক মিটিয়ে ফেলতে বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭ মাসের সময় নেওয়া হয়েছে। সেই সময়সীমা শেষ হবে ডিসেন্বরে। তবে, অনিলের আশা সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংস্থা অন্তত ৬০ শতাংশ ক্ষতি সামাল দিতে পারবে। বাকি অর্থও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জোগাড় করা যাবে বলে আশাবাদী অনিল।
ক্ষতির অঙ্কের মোকাবিলায় রিলায়েন্স কমিউনিকেশন এখন তাকিয়ে আছে কানাডার ব্রুকফিল্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচারের দিকে। অনিল জানিয়েছেন, কানাডার এই সংস্থাকে রিলায়েন্স কমিউনিকেশন তাঁদের টাওয়ার ব্যবসা হস্তান্তর করে দিচ্ছে। এর থেকে ১১,০০০ কোটি টাকা পাবে রিলায়েন্স কমিউনিকেশন। এছাড়া, এয়ারসেলের সঙ্গে রিলায়েন্স কমিউনিকেশনের সংযুক্তিকরণে তৈরি হচ্ছে নতুন সংস্থা এয়ারকম। এখান থেকেও একটা মোটা অঙ্কের অর্থ রিলায়েন্স কমিউনিকেশনের ঝোলায় আসবে। অনিলের মতে, এই দুই অঙ্ক মিলিয়ে তা ২৫,০০০ কোটি টাকা দাঁড়াবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই অর্থ রিলায়েন্স কমিউনিকেশনের হাতে চলে আসার কথা। ২৫,০০০ কোটি টাকা দিয়ে ৬০ শতাংশ ক্ষতি সামাল দেওয়া যাবে বলেই দাবি অনিলের।
সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই দুই চুক্তি কার্যকর না হলে যে রিলায়েন্স কমিউনিকেশনকে আরও বিপাকে পড়তে হবে তা মেনে নিয়েছেন অনিল। সেক্ষেত্রে অবশ্য তাঁর আত্মবিশ্বাসী উত্তর, তাহলে ক্ষতির পরিমাণকে ইকুইটিতে পরিবর্তন করে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সংস্থার পরিচালন ব্যবস্থায় কোনও প্রভাব পড়বে না তো? তা নিয়ে অবশ্য কিছু খোলসা করেননি অনিল।
তবে, রিলায়েন্স জিও-র জন্য যে এতবড় ক্ষতির মুখ দেখতে হবে তা ভাবতে পারেনি রিলায়েন্স কমিউনিকেশন। ২০১৫-১৬ আর্থিক বর্ষে ৬৬০ কোটি টাকার লভ্যাংশ গুণেছিল রিলায়েন্স কমিউনিকেশন। কিন্তু, গত অর্থবর্ষে ১,২৮৩ কোটি টাকা লোকসান করে তারা। জিও মোবাইল পরিষেবার প্রবেশ করার পর যেভাবে ফ্রি-অফার এবং গ্রাহকদের স্বার্থকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে আসছে তাতে মোবাইল পরিষেবায় আয়ের পরিমাণ কমে গিয়েছে অন্য সংস্থাগুলিরও। এবার রিলায়েন্স কমিউনিকেশনকেও এর মাসুল গুণতে হচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই।