পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষ ও তর্পণ বিধি নিয়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য একনজরে
কলকাতার জনপ্রিয় জ্যোতিষী শ্রী শুভ্র ভট্টাচার্য (শাস্ত্রী) পিতৃপক্ষ, দেবীপক্ষ ও মহালয়ায় তর্পণ সম্পর্কে জানিয়েছেন। জেনে নিন নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষ কি ?
বছরের
১২মাসে
২৪টি
পক্ষ
রয়েছে,
তার
মধ্যে
২টি
পক্ষ
বিশেষ
তাৎপর্য্যপূর্ণ।
প্রথমটি
পিতৃপক্ষ
ও
দ্বিতীয়টি
দেবীপক্ষ।
আশ্বিনের
কৃষ্ণ
পক্ষের
তিথীকে
বলা
হয়
মহালয়া।
এই
কৃষ্ণ
পক্ষকে
বলা
হয়
অপরপক্ষ
কিংবা
পিতৃপক্ষ।
পিতৃপক্ষে
স্বর্গত
পিতৃপুরুষের
উদ্দেশ্যে
পার্বন
শ্রাদ্ধ
ও
তর্পন
করা
হয়।
যমালয়
থেকে
মর্ত্যলোকে
এ
সময়
পিতৃ
পুরুষেরা
আসেন।
তাদেরকে
তৃপ্ত
করার
জন্য
তিল,
জল,
দান
করা
হয়।
এবং
তাহাদের
যাত্রাপথকে
আলোকিত
করার
জন্য
উল্কাদান
করা
হয়।
মহাভারতে
বলা
হয়েছে
যে,
মহাবীর
কর্ণের
আত্মা
স্বর্গে
গেলে
সেখানে
তাঁকে
খেতে
দেওয়া
হল
শুধুই
সোনা
আর
ধনরত্ন।
'ব্যাপার
কী?'
কর্ণ
জিজ্ঞাসা
করলেন
ইন্দ্রকে
।
ইন্দ্র
বললেন,
'তুমি
সারাজীবন
সোনাদানাই
দান
করেছো,
পিতৃপুরুষকে
জল
দাও
নি।
তাই
তোমার
জন্যে
এই
ব্যবস্থা।'
কর্ণ
বললেন,
'আমার
কী
দোষ?
আমার
পিতৃপুরুষের
কথা
তো
আমি
জানতে
পারলাম
যুদ্ধ
শুরুর
আগের
রাতে
।মা
কুন্তী
আমাকে
এসে
বললেন,
আমি
নাকি
তাঁর
ছেলে।
তারপর
যুদ্ধে
ভাইয়ের
হাতেই
মৃত্যু
হলো।
পিতৃতর্পণের
সময়ই
তো
পেলাম
না
।'
ইন্দ্র
বুঝলেন,
কর্ণের
দোষ
নেই।
তাই
তিনি
কর্ণকে
পনেরো
দিনের
জন্য
মর্ত্যে
ফিরে
গিয়ে
পিতৃপুরুষকে
জল
ও
অন্ন
দিতে
অনুমতি
দিলেন।
ইন্দ্রের
কথা
মতো
এক
পক্ষকাল
ধরে
কর্ণ
মর্ত্যে
অবস্থান
করে
পিতৃপুরুষকে
অন্নজল
দিলেন।
তাঁর
পাপ
স্খলন
হলো
এবং
যে
পক্ষকাল
কর্ণ
মর্ত্যে
এসে
পিতৃপুরুষকে
জল
দিলেন
সেই
পক্ষটি
পরিচিত
হল
পিতৃপক্ষ
নামে।
এই
অমাবস্যায়
পিতৃপূজা
সেরে
পরের
পক্ষে
দেবীপূজায়
প্রবৃত্ত
হতে
হয়।
তাই
দেবীপূজার
পক্ষকে
বলা
হয়
দেবীপক্ষ
বা
মাতৃপক্ষ,
মহালয়া
হচ্ছে
পিতৃপক্ষের
শেষ
দিন
এবং
দেবী
পক্ষের
শুরুর
পূর্ব
দিন
পিতৃপক্ষে
আত্নসংযম
করে
দেবী
পক্ষে
শক্তি
সাধনায়
প্রবেশ
করতে
হয়।
দেবী
শক্তির
আদিশক্তি,
তিনি
সর্বভূতে
বিরাজিত।
তিনি
মঙ্গল
দায়িনী
করুনাময়ী।
সাধক
সাধনা
করে
দেবীর
বর
লাভের
জন্য,
দেবীর
মহান
আলয়ে
প্রবেশ
করার
সুযোগ
করেন
বলেই
এ
দিনটিকে
বলা
হয়
মহালয়া।
মহালয়ার
পর
প্রতিপদ
তিথি
থেকে
দেবী
বন্দনা
শুরু
হয়।
কোন
কোন
অঞ্চলে
দেবীর
আরাধনা
প্রতিপদ
থেকে
শুরু
হয়।আমাদের
এখানে
ষষ্ঠ
তিথি
থেকে
দেবী
বন্দনা
শুরু
হয়।
দুই
মতেই
দেবী
পূজার
রীতি
প্রচলিত
আছে।
হিন্দুধর্ম মতে, পিতৃপক্ষ পূর্বপূরুষের তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। এই পক্ষ পিত্রুপক্ষ, ষোলা শ্রাদ্ধ, কানাগাত, জিতিয়া, মহালয়া পক্ষ ও অপরপক্ষ নামেও পরিচিত।
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, যেহেতু পিতৃপক্ষে প্রেতকর্ম (শ্রাদ্ধ), তর্পণ ইত্যাদি মৃত্যু-সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়, সেই হেতু এই পক্ষ শুভকার্যের জন্য প্রশস্ত নয়। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে গণেশ উৎসবের পরবর্তী পূর্ণিমা (ভাদ্রপূর্ণিমা) তিথিতে এই পক্ষ সূচিত হয় এবং সমাপ্ত হয় সর্বপিতৃ অমাবস্যা, মহালয়া অমাবস্যা বা মহালয়া দিবসে। উত্তর ভারত ও নেপালে ভাদ্রের পরিবর্তে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষকে পিতৃপক্ষ বলা হয়।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুদেবতা যম। তিনিই সদ্যমৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। পরবর্তী প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন এবং পরমাত্মায় (ঈশ্বর) লীন হন এবং এই প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে উঠে যান। এই কারণে, কেবলমাত্র জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী তিন প্রজন্মেরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়ে থাকে; এবং এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
হিন্দু মহাকাব্য (যা হিন্দুশাস্ত্রের মধ্যে ইতিহাস নামে পরিচিত) অনুযায়ী, সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষ সূচিত হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময় পূর্বপুরুষগণ পিতৃলোক পরিত্যাগ করে তাঁদের উত্তরপুরুষদের গৃহে অবস্থান করেন। এর পর সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করলে, তাঁরা পুনরায় পিতৃলোকে ফিরে যান। পিতৃগণের অবস্থানের প্রথম পক্ষে হিন্দুদের পিতৃপুরুষগণের উদ্দেশ্যে তর্পণাদি করতে হয়।
মহাভারত অনুযায়ী, প্রসিদ্ধ দাতা কর্ণের মৃত্যু হলে তাঁর আত্মা স্বর্গে গমন করলে, তাঁকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন, কর্ণ সারা জীবন স্বর্ণই দান করেছেন, তিনি পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কোনোদিন খাদ্য প্রদান করেননি। তাই স্বর্গে তাঁকে স্বর্ণই খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। কর্ণ বলেন, তিনি যেহেতু তাঁর পিতৃগণের সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না, তাই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পিতৃগণকে স্বর্ণ প্রদান করেননি। এই কারণে কর্ণকে ষোলো দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয় । এই কাহিনির কোনো কোনো পাঠান্তরে, ইন্দ্রের বদলে যমকে দেখা যায়।
মহালয়া পক্ষের পনেরোটি তিথির নাম হল প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও অমাবস্যা। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, যে ব্যক্তি তর্পণে ইচ্ছুক হন, তাঁকে তাঁর পিতার মৃত্যুর তিথিতে তর্পণ করতে হয়।
পিতৃপক্ষে পুত্র কর্তৃক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হিন্দুধর্মে অবশ্য করণীয় একটি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের ফলেই মৃতের আত্মা স্বর্গে প্রবেশাধিকার পান। এই প্রসঙ্গে গরুড় পুরাণ গ্রন্থে বলা হয়েছে, "পুত্র বিনা মুক্তি নাই।" ধর্মগ্রন্থে গৃহস্থদের দেব, ভূত ও অতিথিদের সঙ্গে পিতৃতর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মার্কণ্ডেয় পুরাণ গ্রন্থে বলা হয়েছে, পিতৃগণ শ্রাদ্ধে তুষ্ট হলে স্বাস্থ্য, ধন, জ্ঞান ও দীর্ঘায়ু এবং পরিশেষে উত্তরপুরুষকে স্বর্গ ও মোক্ষ প্রদান করেন।
বাৎসরিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাঁরা অপারগ, তাঁরা সর্বপিতৃ অমাবস্যা পালন করে পিতৃদায় থেকে মুক্ত হতে পারেন। শর্মার মতে, শ্রাদ্ধ বংশের প্রধান ধর্মানুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে পূর্ববর্তী তিন পুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ড ও জল প্রদান করা হয়, তাঁদের নাম উচ্চারণ করা হয় এবং গোত্রের পিতাকে স্মরণ করা হয়। এই কারণে একজন ব্যক্তির পক্ষে বংশের ছয় প্রজন্মের নাম স্মরণ রাখা সম্ভব হয় এবং এর ফলে বংশের বন্ধন দৃঢ় হয়। ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতাত্ত্বিক উষা মেননের মতেও, পিতৃপক্ষ বংশের বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে। এই পক্ষে বংশের বর্তমান প্রজন্ম পূর্বপুরুষের নাম স্মরণ করে তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পিতৃপুরুষের ঋণ হিন্দুধর্মে পিতৃমাতৃঋণ অথবা গুরুঋণের সমান গুরুত্বপূর্ণ।
জীবিত ব্যক্তির পিতা বা পিতামহ যে তিথিতে মারা যান, পিতৃপক্ষের সেই তিথিতে তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই নিয়মের কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। পূর্ববর্তী বছরে মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ হয় চতুর্থী (চৌথা ভরণী) বা পঞ্চমী (ভরণী পঞ্চমী) তিথিতে। সধবা নারীর মৃত্যু হলে, তাঁর শ্রাদ্ধ হয় নবমী (অবিধবা নবমী) তিথিতে। বিপত্নীক ব্যক্তি ব্রাহ্মণী নারীদের শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রণ করেন। শিশু বা সন্ন্যাসীর শ্রাদ্ধ হয় চতুর্দশী (ঘট চতুর্দশী) তিথিতে। অস্ত্রাঘাতে বা অপঘাতে মৃত ব্যক্তিদেরও শ্রাদ্ধ হয় এই তিথিতেই (ঘায়েল চতুর্দশী)।
সর্বপিতৃ অমাবস্যা দিবসে তিথির নিয়মের বাইরে সকল পূর্বপুরুষেরই শ্রাদ্ধ করা হয়।৪যাঁরা নির্দিষ্ট দিনে শ্রাদ্ধ করতে ভুলে যান, তাঁরা এই দিন শ্রাদ্ধ করতে পারেন। এই দিন গয়ায় শ্রাদ্ধ করলে তা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়। উল্লেখ্য, গয়ায় সমগ্র পিতৃপক্ষ জুড়ে মেলা চলে। বাংলায় মহালয়ার দিন দুর্গাপূজার সূচনা হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিন দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আবির্ভূতা হন। মহালয়ার দিন অতি প্রত্যুষে চণ্ডীপাঠ করার রীতি রয়েছে। আশ্বিন শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে দৌহিত্র মাতামহের তর্পণ করেন।
মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় দ্বিপ্রহরে নদী বা হ্রদের তীরে বা শ্রাদ্ধকর্তার গৃহে। অনেক পরিবার বারাণসী বা গয়ায় গিয়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করেন।
মৃত ব্যক্তির পুত্র (বহুপুত্রক হলে জ্যেষ্ঠ পুত্র) বা পিতৃকুলের কোনো পুরুষ আত্মীয়ই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের অধিকারী এবং শ্রাদ্ধ কেবলমাত্র পূর্ববর্তী তিন পুরুষেরই হয়ে থাকে। মাতার কুলে পুরুষ সদস্য না থাকলে সর্বপিতৃ অমাবস্যায় দৌহিত্র মাতামহের শ্রাদ্ধ করতে পারেন। কোনো কোনো বর্ণে কেবলমাত্র পূর্ববর্তী এক পুরুষেরই শ্রাদ্ধ করা হয়।
পূর্বপুরুষকে যে খাদ্য উৎসর্গ করা হয়, তা সাধারণত রান্না করে রুপো বা তামার পাত্রে কলাপাতার উপর দেওয়া হয়। এই খাদ্যগুলি হল ক্ষীর, লপসি, ভাত, ডাল, গুড় ও কুমড়ো।
শ্রাদ্ধকর্তাকে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে ধুতি পরে শ্রাদ্ধ করতে হয়। শ্রাদ্ধের পূর্বে তিনি কুশাঙ্গুরীয় (কুশ ঘাসের আঙটি) ধারণ করেন। এরপর সেই আঙটিতে পূর্বপুরুষদের আবাহন করা হয়। শ্রাদ্ধ খালি গায়ে করতে হয়, কারণ শ্রাদ্ধ চলাকালীন যজ্ঞোপবীতের অবস্থান বারংবার পরিবর্তন করতে হয়। শ্রাদ্ধের সময় সিদ্ধ অন্ন ও ময়দা ঘি ও তিল দিয়ে মাখিয়ে পিণ্ডের আকারে উৎসর্গ করা হয়। একে পিণ্ডদান বলে। এরপর দুর্বাঘাস, শালগ্রাম শিলা বা স্বর্ণমূর্তিতে বিষ্ণু এবং যমের পূজা করা হয়। এরপর পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে খাদ্য প্রদান করা হয়। এই খাদ্য সাধারণত ছাদে রেখে আসা হয়। যদি কোনো কাক এসে সেই খাদ্য খেয়ে যায়, তাহলে ধরা হয় যে খাদ্য পিতৃগণ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। মনে করা হয়, পাখিটি আসলে যম বা পিতৃগণের আত্মার প্রতিনিধি।গোরু ও কুকুরদেরও খাওয়ানো হয়। ব্রাহ্মণদের ভোজন করানো হয়। পূর্বপুরুষ (কাকের বেশে) এবং ব্রাহ্মণেরা ভোজন করলেই তবে পরিবারের সদস্যরা অন্নগ্রহণ করেন।
কোনো কোনো পরিবারে পিতৃপক্ষে ভাগবত পুরাণ, ভগবদ্গীতা বা শ্রীশ্রীচণ্ডী পাঠ করা হয়। অনেকে পূর্বপুরুষের মঙ্গল কামনায় ব্রাহ্মণদের দান করেন।
তর্পণ :
তর্পণ শব্দের ব্যুৎপত্তি হল তৃপ + অনট। তৃপ ধাতুর অর্থ তৃপ্তি সাধন করা। এখানে তৃপ্তি সাধন বলতে দেব-ঋষি- পিতৃ-মনুষ্যগণের তৃপ্তিসাধনকে বোঝানো হয়েছে। সাধারণভাবে মৃত পূর্বপুরুষগণকে জলদান করাকেই তর্পণ বলা হয়। মৃত পূর্বপুরুষ শব্দে যাদের সপিণ্ডীকরণ (বাৎসরিক শ্রাদ্ধ) করা হয়েছে তাদের বোঝাবে। কিন্তু কোনও জীবৎপিতৃক (যার পিতা জীবিত আছে) ব্যক্তি তর্পণ করতে পারবে না। আমাদের পূর্বপুরুষগণ তাদের বংশধরগণের কাছে পিণ্ড ছাড়াও জল কাঙ্খা করেন।
কারণ হিন্দু শাস্ত্রানুসারে দেহের বিনাশ হলেও আত্মার বিনাশ হয় না। তাই আমাদের পিতৃগণের দেহে যে আত্মা ছিলেন তিনি এখন যে শরীরেই অবস্থান করুন সেই শরীরেই জলক্রিয়া ও শ্রাদ্ধের দ্বারা তিনি তৃপ্তি লাভ করে থাকেন। শাস্ত্রমতে তর্পণ জলের ও শাস্ত্রীয় দ্রব্যের পরমাণু অর্থাৎ সূক্ষ্মতম কণা মন্ত্রবলে তাঁর বর্তমান দেহের ভক্ষ্য বস্তুর পর মাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে থাকে। তাই দেব-ঋষি-পিতৃ-মনুষ্যগণের তর্পণ করলে তাঁরা খুশি হন ও বিনিময়ে তাঁরা আমাদের সুখ,সমৃদ্ধি, সাফল্য,পরিপাকশক্তির বৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু দান করেন।
তর্পণ প্রতিদিনই করা উচিত। কিন্তু নানা কাজে মানুষ ব্যস্ত থাকায় পিতৃপক্ষের (কোজাগরী পূর্ণিমার আগের পূর্ণিমার পর প্রতিপদ থেকে মহালয়া পর্যন্ত) পনেরো দিন তর্পণ করে থাকে। যারা তাতেও অক্ষম তারা মহালয়ার দিন তর্পণ করে। স্নানাঙ্গ-তর্পণ স্নানান্তেই করিতে হয়। স্নানান্তে পূর্বমুখে নদীতে নাভিমাত্র জলে দাঁড়াইয়া, যজ্ঞোপবীত বাম স্কন্ধে রাখিয়া তিলক ধারণ করিবে।
জ্যোতিষী শ্রী শুভ্র ভট্টাচার্য (শাস্ত্রী)র সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ৯৭৪৮১১৮৮১৯ নম্বরে। ইমেলও করতে পারেন [email protected]